রাজশাহীতে বেড়েই চলেছে পদ্মার পানি

Looks like you've blocked notifications!

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বেড়েই চলছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ১৭ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বেড়েছে ৭ সেন্টিমিটার।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানিবিজ্ঞান বিভাগের একটি সূত্র জানায়, রাজশাহীতে পদ্মার বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। বর্তমানে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। চলতি বছরের ৩১ মার্চ রাজশাহীতে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৯৬ মিটার। স্বাধীনতা-উত্তর রাজশাহীর ৪৫ বছরের ইতিহাসে এটাই ছিল পদ্মায় পানিপ্রবাহের সর্বনিম্ন উচ্চতা। এর পর গত ১ জুন থেকে রাজশাহীতে পদ্মার পানির উচ্চতা বাড়তে থাকে। ওই দিন পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৯৫ মিটার। গত ৮৫ দিনে পানি বেড়েছে ১০ দশমিক ১০ মিটার। বর্তমানে পদ্মায় যে হারে পানি বাড়ছে, তাতে দুই বছর পর এবার রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। সূত্রমতে, ২০১৪ সাল ও গতবছর রাজশাহীতে পদ্মা বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

এর আগে ২০০৩ সালের পর টানা নয় বছর ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাজশাহীতে পদ্মা বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার। এরপর নয় বছর রাজশাহীতে পদ্মা বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপৎসীমা অতিক্রম করে। ওই বছর পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার। তবে স্বাধীনতার পরবর্তী এ পর্যন্ত রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৯৯৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ১৯ দশমিক ৬৮ মিটার।

এদিকে পদ্মায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে বাঘা পর্যন্ত পদ্মার উভয় তীরে এবং নদীর ভেতরের চরাঞ্চলের বসতবাড়ির মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। নগরীর লালন শাহ পার্ক থেকে তালাইমারী শহীদ মিনার পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধের খুব কাছে পানি থৈথৈ করছে। এরই মধ্যে শহর রক্ষা বাঁধের ভেতর গড়ে ওঠা বসতিতে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে চর খিদিরপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। চরাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ গবাদিপশুর খাদ্য সংগ্রহ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন।

অন্যদিকে, পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের মধ্যচরে নতুনভাবে বসতি স্থাপন করা ২৫০টি বাড়িতে হাঁটুপানি উঠে গেছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু জানান, মধ্যচরের ওই পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে অত্যন্ত দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তারা গবাদিপশু নিয়ে পড়েছে বেশি বিপদে। দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাবার সংকট।

এ ছাড়া হরিপুর ইউনিয়নের নবগঙ্গা এলাকায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ওই এলাকার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তা ছাড়া পানিবন্দি অবস্থায় গবাদিপশু নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন চর মাঝারদিয়ার এলাকার লোকজন। সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল জানান, বাড়ির আশপাশ এলাকায় পানি উঠে যাওয়ায় গবাদিপশুর খাবার সংগ্রহ করা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে চর মাঝারদিয়ারের লোকজন।

এদিকে পদ্মায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে তীব্র স্রোত আছড়ে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি বিপদের আশঙ্কা করা হচ্ছে বিনোদনের নামে পদ্মায় অবাধে নৌকা ভ্রমণে। অনেকেই প্রতিদিন বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজন নিয়ে পদ্মায় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভ্রমণ করছে। মাঝনদীতে নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে অথবা তীব্র স্রোতে কোনো কারণে নৌকা উল্টে গেলে সমূহ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।

গত মঙ্গলবার নগরীর বড়কুঠি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকার ইঞ্জিন মাঝনদীতে বন্ধ হয়ে যায়। তবে সে সময় বাতাস না থাকায় কোনো বিপদ ঘটেনি। তাই পানি না কমা পর্যন্ত পদ্মায় নৌ-ভ্রমণ বন্ধ রাখা উচিত বলে মনে করছেন পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা।

পদ্মার পানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেছুর রহমান বলেন, ‘এখন বর্ষাকাল। সে হিসেবে পদ্মায় স্বাভাবিক হারেই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মাঝে কয়েক দিন পানি কমে গিয়েছিল। এখন আবার সেটি বাড়ছে।’ বর্ষাকালে এমনটি হতেই পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।