রাজশাহী নগরীর দিকে ধেয়ে আসছে পদ্মা

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : এনটিভি

ভারতের ফারাক্কার প্রায় সবগুলো স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার পর রাজশাহীতে বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে পদ্মার পানি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানি বেড়েছে ছয় সেন্টিমিটার। আর আজ সকাল থেকে পদ্মার পানির উচ্চতা রয়েছে ১৮ দশমিক ৪৬ মিটার, বিপৎসীমা থেকে যা মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচে। তবে দিনভর আর বাড়েনি পানি।

এদিকে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহী নগরীর শহররক্ষা বাঁধ সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধে চাপ পড়েছে। বাঁধের পশ্চিম-দক্ষিণ অংশে ট্রি-গ্রোয়েন এলাকায় ব্রিক ম্যাট্রেসিংয়ের কিছু ইট সরে গেছে। সেখানে জিও ব্যাগ দিয়ে তা ঠেকানো হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক গ্রাম। ঘরছাড়া হচ্ছে হাজারো মানুষ। শুধু ঘরছাড়াই নয়, হারাতে হচ্ছে নিজের বাপ-দাদার ঘরবাড়ি, সহায়-সম্বল। অনেকেই ঘরবাড়ি রেখে চলে আসছে উঁচু জায়গায়। তাদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ।

পদ্মায় অব্যাহতভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার পদ্মাপারের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এসব এলাকায় পানি ঢুকে যাওয়ায় শত শত পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে বানভাসি মানুষ। এসব পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস কৃষিকাজ ও গবাদি পশু পালন। পানিতে সবকিছু ভেসে যাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে তারা পড়েছে চরম বেকায়দায়।

নগরীর পদ্মা নদীসংলগ্ন সিমলা পার্ক, লালন শাহ পার্ক, পদ্মা গার্ডেন, বড় কুঠি, কুমারপাড়া, আলুপট্টি এলাকায় বাঁধের উচ্চতার সমান পানির উচ্চতা হয়ে গেছে। আর মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার পানি বাড়লে পানি শহররক্ষা বাঁধ অতিক্রম করবে। এ ছাড়া নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় পুলিশ লাইনসংলগ্ন বাঁধ গত বছর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং তা সময়মতো সংস্কার করতে না পারায় তা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নগরীর মানুষদের মধ্যে। ওই বাঁধের বেশ কয়েক জায়গায় লাল পতাকা দিয়ে বিপদসংকেত দেখানো হচ্ছে।

নগরীর শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা আশরাফ হোসেন বলেন, যেভাবে পদ্মার পানি বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে বাঁধ ডুবে শহর প্লাবিত হবে। পানি বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে। এর মধ্যে আমাদের মহল্লার ভেতর পদ্মার পানি ঢুকে গেছে। এভাবে কয়েকদিন পানি বাড়লে আমি নিশ্চিত, বাঁধ ডুবে যাবে।

পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলে রেজবি হাসান মুঞ্জিল জানান, চরাঞ্চলের এক হাজার ২০০ পরিবারের বাড়িঘর ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজিসহ ফসলের। চরের মানুষের প্রধান অর্থনৈতিক অবলম্বন পশু পালন। বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় গরু-ছাগল নিয়ে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। তিনি জানান, সরকারি-বেসরকারিভাবে তার ইউনিয়নে এখনো কোনো ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেসুর রহমান জানান, বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছর ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়া থাকে। ফারাক্কা বাঁধের পানি ধরে রাখার সক্ষমতা ৫০ হাজার কিউসেক। এর অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতে পারে না। এ বছর গঙ্গা বেসিনের বিহার, উড়িষ্যা ও উত্তর প্রদেশে প্রবল বর্ষণ হওয়ায় সেই বর্ষণের পানি ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে এসে পদ্মার পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা আরো বাড়বে।

পাউবো কর্মকর্তা আরো জানান, গত কয়েকদিন থেকে পদ্মায় পানি বাড়ায় রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধে চাপ পড়েছে। বাঁধের পশ্চিম-দক্ষিণ অংশে ব্রিক ম্যাট্রেসিংয়ের কিছু ইট সরে গেছে। সেখানে জিও ব্যাগ দিয়ে তা ঠেকানো হচ্ছে। এটা ধস নয়। এখন পর্যন্ত শহররক্ষা বাঁধ নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। যাতে বাঁধ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।