অ্যামোনিয়া গ্যাস দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে যা আছে

Looks like you've blocked notifications!

চট্টগ্রামের আনোয়ারার ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ড্যাপ) কারখানার উপপ্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) দিলীপ কুমার বড়ুয়া এবং টেকনিক্যাল ও মেইনটেন্যান্স সার্ভিস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নকিবুল ইসলাম। তাঁরা স্বপদে বহাল থাকলে ওই কারখানার প্ল্যান্ট কারো জন্য নিরাপদ নয়। তাই তাঁদের প্রত্যাহারপূর্বক বিভাগীয় শাস্তি ও তাঁদের আনুতোষিক থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। 

এই সুপারিশ করে ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এ সময় তদন্ত কমিটির প্রধান মুমিনুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।

গত ২২ আগস্ট রাত ১০টার দিকে ডিএপি সার কারখানায় অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর জেলা প্রশাসক তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে যা আছে 
বিগত ২২ আগস্ট রাত প্রায় ১০টার সময় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানা ১-এর অ্যামোনিয়া ট্যাংক ( R-903 ) বিস্ফোরিত হয় এবং রক্ষিত অ্যামোনিয়া বাতাস, মাটি এবং পানিতে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। 

দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রামের কার্যালয়ের স্মারক নম্বর ০৫. ৪২. ১৫০০. ০০২. ০২. ০০৪. ১৬-২৬২ তারিখ ২৩/০৮/২০১৬ নম্বর স্মারক মূলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আনোয়ারা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্ণফুলী থানাকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির কার্যপরিধি 
১। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান

২। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিত করা।

৩। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা।

৪। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন।

কমিটির কর্মপদ্ধতি : গঠিত কমিটি তদন্ত কার্যের জন্য দুর্ঘটনার দিন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তিকৃত গ্যাসের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ৪৮ জন রোগীর অবস্থা পরিদর্শন করে এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগীদের ক্ষতির মাত্রা সম্পর্কে অবহিত হয়।

তদন্তে কারিগরি বিষয়ের ক্ষেত্রে অত্র কমিটি বিসিআইসি কর্তৃক ২৩-০৮-২০১৬ তারিখের ৩৬.০১.০১৮০৭.৩২.০০২৩.২০১৬.২২ নং স্মারকে গঠিত কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে।

তদন্তের কাজে কারখানা সংশ্লিষ্ট ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া ঘটনার পরবর্তী দিন থেকে ২৯-০৮-২০১৬ তারিখ পর্যন্ত দুর্ঘটনাসংক্রান্ত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত অনুসন্ধান প্রতিবেদনগুলো বিবেচনায় আনা হয়। কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল একাধিকবার পরিদর্শন করেন। 

ঘটনাস্থল পরিদর্শন, প্লান্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবানবন্দি গ্রহণশেষে প্রাপ্ত তথ্য ড্যাপ ১-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয় এবং তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রদত্ত বক্তব্য তদন্ত প্রতিবেদনে বিবেচনায় আনা হয়।

দুর্ঘটনাস্থলের বর্ণনা
দুর্ঘটনা ঘটার পরদিন ২৩-০৮-২০১৬ তারিখ সকাল ১০টায় অত্র তদন্ত কমিটির সদস্যরা বিসিআইসি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্যদের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে জানা যায়, পিডিবি কর্তৃক বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় ২০ আগস্ট তারিখ থেকে ড্যাপ-১ কারখানাটি বন্ধ ছিল। কারখানা বন্ধ থাকা অবস্থায় ২২ আগস্ট রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় ৫০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্টসংলগ্ন অ্যামোনিয়া ট্যাংকটি নিচের দিক থেকে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে ট্যাংকের নিচের দিক থেকে বেরিয়ে আসা অ্যামোনিয়ার চাপে ট্যাংকটি পাইপ র‌্যাকের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে আনুমানিক ২০ ফুট দূরে ভূপাতিত হয়। ভূপাতিত ট্যাংকটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এই বিস্ফোরণের ট্যাংকের সঙ্গে সংযুক্ত পাইপলাইনগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণকালীন ট্যাংকে রক্ষিত ৩৪০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া ট্যাংকের বেস-ডাইকে পতিত হয়। ফলে ব্যাপক পরিমাণে অ্যামোনিয়া বাতাসে মিশ্রিত হওয়ার আগেই বেস-ডাইকে পড়ে থাকার ফলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটিয়ে উক্ত অ্যামোনিয়া দ্রবীভূত করে ফেলে। ফলে উক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস বাতাসে মিশ্রিত হতে না পারায় ব্যাপক জানমালের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে।

দুর্ঘটনার পর সিইউএফএলের দুটি পানিবাহী গাড়ি, কাফকোর দুটি পানিবাহী গাড়ি এবং ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট পানি ছিটানোতে অংশ নেয়। উল্লেখ্য, যে ড্যাপ-এর নিজস্ব কোনো ফায়ার ফাইটিং এবং সেফটি ইউনিট না থাকায় তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পূর্ণরূপে অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।

দুর্ঘটনাকালীন বায়ুপ্রবাহ কর্ণফুলী নদী অভিমুখে হওয়ায় বাতাসে মিশ্রিত গ্যাস পতেঙ্গা, বিমানবন্দর ও হালিশহর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং জনমনে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। গ্যাস বিস্ফোরণের পরপরই ফ্যাক্টরিতে অবস্থানরত প্রায় ৪৭ জন লোক আহত হয় যার অধিকাংশই আনসার সদস্য। ঘটনার সময় কারখানার অধিকাংশ কর্মী অনুপস্থিত থাকায় আহতদের মধ্যে তাদের সংখ্যা কম। ফায়ার ফাইটিং ইউনিটগুলোর ব্যাপক তৎপরতার ফলে দুর্ঘটনার পর কম সংখ্যক মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।


দুর্ঘটনার কারণ
অ্যামোনিয়া ট্যাংকটির নিরাপত্তার জন্য পাঁচ ধরনের সুরক্ষা যন্ত্র রয়েছে। দুর্ঘটনার সময় তার সবগুলোই অকেজো ছিল।

ক.
১) ট্যাংকের তাপমাত্রা কমানোর জন্য ট্যাংকের কুলিং/রেফ্রিজারেশন কম্প্রেসার সিস্টেম তিন বছরের অধিক সময় ধরে নষ্ট ছিল।

২) ট্যাংকে রাখা গ্যাসের চাপ মাপার জন্য দুটি প্রেসার গজ রয়েছে, যা দীর্ঘদিন যাবৎ নষ্ট ছিল।

৩) ট্যাংকের তাপ ও চাপ মাপার জন্য স্বয়ংক্রিয় ডিসিএস সিস্টেম রয়েছে। এই সিস্টেমে দুটি প্রেসার ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ট্যাংকের গ্যাসের চাপ দুটি কম্পিউটারে প্রদর্শিত হয়। যার একটি দীর্ঘদিন যাবৎ নষ্ট ছিল এবং অপরটি দুর্ঘটনার আগের দিন নষ্ট হয়ে যায়।

৪) ট্যাংকে রাখা অতিরিক্ত গ্যাসের চাপ বের করে দেওয়ার জন্য দুটি প্রেসার ভেন্ট রয়েছে। দুর্ঘটনার সময় সে দুটি বন্ধ ছিল।

৫) স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাসের চাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্যাংকে একটি ফ্লেয়ার সিস্টেম রয়েছে। দুর্ঘটনার সময় সেটিও অকেজো ছিল।

অ্যামোনিয়া ট্যাংকে বর্ণিত সব নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি নষ্ট ও বন্ধ থাকায় ৫০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংকটিতে ৩৪০ মেট্রিক টন তরল অ্যামোনিয়া থাকার পরও মাত্রাতিরিক্ত গ্যাসের চাপে ট্যাংকটির নিচের অংশে বেজপ্লেট বরাবর বিস্ফোরণ ঘটে এবং নির্গত গ্যাসের চাপে ট্যাংকটি উড়ে গিয়ে প্রায় ২০ ফুট দূরে ভূপাতিত হয় এবং সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার পর প্ল্যান্ট পরিচালনার সঙ্গে ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দিতে দেখা যায়, বাস্তবে যারা ফ্যাক্টরি পরিচালনা করতেন এবং ট্যাংকটির নিরাপত্তা  নিশ্চিত করতেন তারা প্রায় সবাই অপারেটর এবং তাদের এই ফ্যাক্টরি পরিচালনায় এবং নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেই।

ফ্যাক্টরি পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণে অপারেশন ও মেইন্টেনেন্স নামে দুটি পৃথক বিভাগ রয়েছে। ২০ আগস্ট থেকে উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকার পর সব নিরাপত্তা সিস্টেম নষ্ট থাকার  বিষয়টি অপারেশন বিভাগ থেকে মেইনটেন্যান্স বিভাগকে অবহিত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত বিভাগ সেখানে টেকনিশিয়ান পর্যায়ের লোক পাঠায়। মেইনটেন্যান্স বা ইন্সট্রুমেন্ট বিভাগের টেকনিশিয়ানরা মেরামতে সক্ষম না হয়ে ফিরে আসে। টেকনিশিয়ানদের ব্যর্থতার বিষয়টি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন উপপ্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) দিলীপ কুমার বড়ুয়া এবং টেকনিক্যাল ও মেইনটেন্যান্স সার্ভিস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নকিবুল ইসলামের। তারা সেফটি সিস্টেম মেরামতের বিষয়টি তদারকি করেননি এবং নিজেরা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেননি। প্ল্যান্ট তদারকির বিষয়টি নকিবুল ইসলাম তাঁর রুটিন দায়িত্ব বলে মনে করেননি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তিনি সরাসরি প্ল্যান্ট ভিজিট করেন না, তাঁর অধীনস্তরা করেন। 

দুর্ঘটনারোধে যার মুখ্য ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব ছিল, তিনি হলেন দিলীপ কুমার বড়ুয়া। তাঁর জবানবন্দিতে জানা যায়, তিনি কখনোই কোনো মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন না। এবারও প্রেসার ট্রান্সমিটার সংশ্লিষ্ট শেষ কম্পিউটারটি নষ্ট হলে তিনি মেরামতের উদ্যোগ না নিয়ে স্থানীয় মেকানিকের কাছে তা পাঠিয়ে দেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার ইনস্টল করা কম্পিউটারটি নিজে মেরামতের উদ্যোগ না নিয়ে অনির্ভরযোগ্য ও অননুমোদিত মেকানিকের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং ট্যাংকটির এরূপ বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নিজে না গিয়ে তিনি তাঁর দায়িত্ব অস্বীকার করেছেন।

দিলীপ কুমার বড়ুয়ার জবানবন্দিতে আরো জানা যায়, তিনি কোনো ধরনের মেরামত করতে আগ্রহী নন। তিনি এর আগে একইভাবে ড্যাপ ২-এর জন্য দেড় থেকে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কিনতে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেছেন।

খ. তদন্ত কমিটি মনে করে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ কোম্পানিতে অবস্থিত অপারেশন, মেইনটেন্যান্স, অ্যাডমিন, সিভিল, অ্যাকাউন্টস ও কমার্শিয়াল সেকশনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। দুর্ঘটনার আগে অ্যামোনিয়া ট্যাংকের সব নিরাপত্তাব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেলে মেইনটেন্যা‍ন্স বিভাগকে তা জানানো হলেও তারা কার্যকরী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এমনকি এই বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জিএম নকিবুল ইসলাম ও উপপ্রধান প্রকৌশলী দিলীপ কুমার বড়ুয়া প্ল্যান্টটি পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি।

গ. এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সহকারী প্রকৌশলী সাইদ হাসান, দুলাল কান্তি দেবনাথ (এসএমএ) ও মো. ইকবাল হোসেন (এমও) তাঁদের জবানবন্দিতে জানান, তাঁরা এই প্ল্যান্টে পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও এই প্ল্যান্ট বিষয়ে তাঁদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তদন্ত কমিটির কাছে তাদের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে এই অ্যামোনিয়া ট্যাংকটি যে বিস্ফোরিত হতে পারে এমন ধারণাও তাদের নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ছাড়া ড্যাপ- কর্তৃপক্ষ এরূপ জনবল দিয়ে প্ল্যান্ট চালানোয় তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ বিস্ময়  প্রকাশ করে। কাজী মাসুদুর রহমান (নি.প্র.বিদ্যুৎ) নিজেদের কাজে গাফিলতি ঢাকতে প্ল্যান্টের নির্মাণ দুর্বল ছিল বলে উল্লেখ করেন। ট্যাংকের সব নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি নষ্ট রেখে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য ট্যাংকের নির্মাণ ত্রুটির কথাই তাঁরা উল্লেখ করছেন।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ
দুর্যোগকালীন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। ট্যাংক বিস্ফোরণের ফলে দৃশ্যত ক্ষতিসমূহ নির্ধারণে DAP কর্তৃপক্ষ এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা তথ্যের ওপর নির্ভর করা হয়েছে :

•     ধ্বংসপ্রাপ্ত ট্যাংকের আনুমানিক মূল্য ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা
•     নতুন ট্যাংক স্থাপনে ব্যয় ২০/২২ কোটি টাকা
•     মৎস্যসম্পদের ক্ষতি এক কোটি ২৭ লাখ টাকা
•     প্রাণিসম্পদের ক্ষতি দুই লাখ টাকা

দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ
দুর্ঘটনার দুদিন আগে থেকে প্ল্যান্টটি বন্ধ ছিল। দুর্ঘটনার দিনে ৫০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংকে গ্যাস মজুদ ছিল ৩৪০ মেট্রিক টন। এই অবস্থায় ট্যাংকটি বিস্ফোরিত হওয়ার কথা নয়। দুর্ঘটনার সময় ট্যাংকের পাঁচটি নিরাপত্তা সিস্টেমের সব কটি অকেজো ছিল। বিষয়টি মেইনটেন্যান্স বিভাগকে জানানোর পরও তারা যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বিশেষত উপপ্রধান প্রকৌশলী দিলীপ কুমার বড়ুয়া ও জিএম নকিবুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা রীতিমতো তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অস্বীকার করার শামিল। এই দুই কর্মকর্তা তাঁদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে এই দুর্ঘটনা থেকে প্ল্যান্টটি রক্ষা করা সম্ভব হতো। সাক্ষ্য, প্রমাণ, লিখিত জবানবন্দি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় তদন্ত কমিটি মনে করে এই দুই কর্মকর্তা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের মনোভাব দৃষ্টে প্রতীয়মান হয়, এই দুই কর্মকর্তা স্বপদে বহাল থাকলে এই প্ল্যান্টটি কারো জন্য নিরাপদ নয়। তদন্ত কমিটি তাদের প্রত্যাহারপূর্বক বিভাগীয় শাস্তি ও তাদের আনুতোষিক থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশ করছে।

সুপারিশ
ক) ড্যাপের ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও আন্তবিভাগীয় সমন্বয় সাধন জরুরি।

খ) তাদের সব কাজকর্মে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে এটি জবাবদিহিতাবিহীন একটি প্রতিষ্ঠান।

গ) ড্যাপের দৈনন্দিন কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ক্রয়, মেরামত ও অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ব্যবস্থাপকের ওপর ন্যস্ত করা প্রয়োজন।

ঙ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটি শক্তিশালী চেইন-অব-কমান্ড প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

চ) ড্যাপ-১ ও ড্যাপ-২ ফ্যাক্টরি দুটি অধিকাংশ ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য সিইউএফএল এবং কাফকোর ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। ড্যাপের নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং এবং সেফটি ইউনিট নেই, যা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।