নীলফামারীতে বোরো সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ

Looks like you've blocked notifications!

বাজারে ধানের দর ঊর্ধ্বমুখী হওয়া ও সরকারি খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের অনৈতিক দাবির কারণে নীলফামারীতে বোরো চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হতে চলেছে। এসব কারণে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া মিলাররা চরম লোকসানের মুখে পড়ে চাল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।

এক সময়ের মঙ্গাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত কৃষিনির্ভর নীলফামারী জেলা এরই মধ্যে খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখানকার কৃষকরা বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের বীজ ব্যবহার করে ধান উৎপাদন করে নীলফামারীকে খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলায় রূপান্তরিত করেছে।

গত বোরো মৌসুমে নীলফামারীতে তিন লাখ ৫১ হাজার ৮৮৪ টন চাল আবাদ হয়েছে। সারা বছরের সব ফসল মিলে খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকে দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৮ টন। কিন্তু কাটা-মাড়াই মৌসুমে কৃষকরা ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তাদের লোকসানে পড়তে হয়। মৌসুমের সময় বোরো ধান বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা মণ দরে। প্রতিমণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে অন্তত সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এতে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় কৃষকরা আর্থিকভাবে হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত।

এবারের বোরো মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তর নীলফামারী থেকে ১৫ হাজার ৫০৯ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। জেলা খাদ্য বিভাগ চাল সংগ্রহ করতে ৬৪৭ জন চালকল মালিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। সংগ্রহ অভিযানের শুরুতে ধানের দাম কিছুটা কম থাকায় চালকল মালিকরা চার হাজার ১২২ টন চাল খাদ্য গুদামে সরবরাহ করে। এতে তাদের মুনাফা না হলেও লোকসান হয়নি।

বর্তমানে নীলফামারীর হাট-বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা মণ দরে। ফলে ব্যবসায়ীদের ধান থেকে চাল উৎপাদনের খরচও অনেকাংশে বেড়ে যায়। এরপর রয়েছে খাদ্য বিভাগের কর্তাদের অনৈতিক দাবি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নীলফামারী জেলা সদরের দুজন, ডিমলার একজন ও জলঢাকার দুজন চালকল মালিক অভিযোগ করে বলেছেন, সংগ্রহ অভিযানের শুরুতে বাজারে ধানের দাম কিছুটা কম থাকায় খাদ্য গুদামে চুক্তির কিছু চাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে খরচ পড়ছে কমপক্ষে ৩৪ টাকা। সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি ৩২ টাকা। তারপর রয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগের সংগ্রহ অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনৈতিক দাবি। তাদের দাবি পূরণ না হলে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে হয়রানি করে। তাদের কাছে মিলমালিকরা অনেকটাই জিম্মি। সব মিলিয়ে এবারের বোরো সংগ্রহ অভিযানে মিলাররা পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে।

এ ব্যাপারে জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকরা পড়েছে বিপাকে। তারা পোষাতে পারছে না। তবে সংগ্রহ অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনৈতিক দাবির বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।