নূর হোসেনের ‘সাম্রাজ্যে’ নতুন ১০ ‘রাজা’
নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার প্রধান আসামি নূর হোসেনের ‘অপরাধ-সাম্রাজ্য’ এখন নতুন ১০ হাতে। বালুঘাট, মাদক, পরিবহন, ঝুটব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, সরকারি জায়গা দখলসহ অভিনব সব কায়দায় একেকটি খাত নিয়ন্ত্রণ করছে একেকটি গ্রুপ। দখল আর চাঁদাবাজির কৌশলেও এসেছে পরিবর্তন। প্রকাশ্যে এসব অপরাধ তৎপরতা চললেও প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার।
কাঁচপুর ব্রিজসংলগ্ন বালুমহাল, পরিবহন চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সব অপরাধ একহাতেই নিয়ন্ত্রণ করতেন নূর হোসেন। সাত খুনের ঘটনার পর প্রশাসনের তৎপরতায় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় নূর হোসেনের সাম্রাজ্য।
urgentPhoto
এক বছরের ব্যবধানে সেই বালুমহাল আবার বেদখল। সরেজমিনে দেখা যায়, টংঘর আর সবজি চাষের নামে এবার বেড়া দিয়ে চলছে সরকারি জায়গা দখলের মহোৎসব। কাঁচপুর ব্রিজ থেকে তাজ জুট মিল পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার জায়গাজুড়ে দেখা মিলবে দখলদারির এ দৃশ্য। থেমে নেই বালুমহাল ও পরিবহনে চাঁদাবাজিও।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনিরুল, মাজহারুল ও নজরুল—এ তিন ভাই বিভিন্ন সাইট চালায় এবং রাস্তার চাঁদা নেয়।
সরকারি জায়গা দখল আর বালুমহালে নিয়মিত টহলও দেন মাজহারুল। তিনি বলেন, ‘এই পুরো এলাকায় আমি ব্যবসা করি। আমি একে বৈধ বলব না। এটা বিআইডব্লিউটির জায়গা, বৈধ-অবৈধ বিআইডব্লিউটি জানে।’
মাজহারের আপন দুই ভাই মনির ও নজরুল নিয়ন্ত্রণ করছেন শিমরাইলের পরিবহন, মাদক, ফুটপাত আর বিভিন্ন মার্কেটের চাঁদাবাজি। এসব অপরাধকে তাঁরা পালাবদল হিসেবে অভিহিত করেছেন।
শিমরাইল ট্রাকচালক সমিতির নজরুল বলেন, ‘পাথরের যে ব্যবসা নিয়ে গিয়েছিল, তা আমরা ওই সময়ই ব্লক দিয়ে রেখেছি। দলীয় যে একটা সমস্যা আছে, একে ম্যানেজ করে আনো, তাকে ম্যানেজ করে আনো। আমরা নজরুল চেয়ারম্যানের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। তাঁর সঙ্গে অনেক দিন ছিলাম। এ জন্য অনেকের দৃষ্টিশূলে আছি।’
কথা হয় কাভার্ডভ্যান চালক-শ্রমিক সভাপতি মনিরুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বাংলাদেশে আছেন। এই ম্যাকানিজম ওনার, ওনাদের। ওনার অপকর্মের সিজার লিস্ট আমার হাতে, আর এ কারণেই তিনি আমার নাম বলেন।’
ল্যান্ডিং স্টেশন পার্শ্ববর্তী আমির হোসেন ভাণ্ডারির মাদক আস্তানায় দেখা মিলল তাঁর সেকেন্ড ইন কমান্ড আনোয়ারের, যিনি প্রতিবেদককে দেখামাত্রই মারমুখী হয়ে ওঠেন।
আদমজির ঝুট, পরিবহন, নির্মাণ ও সরবরাহ ব্যবসা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন ২১ মামলায় জামিনে থাকা সিদ্ধিরগঞ্জের মতিউর রহমান ওরফে সুন্দর মতি। সিদ্ধিরগঞ্জ যুবলীগের আহ্বায়ক তিনি। আদমজীতে চালের ব্যবসা করেন। কার নিয়ন্ত্রণে এসব ব্যবসা—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন, নিয়ন্ত্রণে থাকব কেন? যে যার মতো করে ব্যবসা করার কথা, ব্যবসা করি।’
তাঁরা সবাই সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এ বিষয়ে কথা হয় ২৫ বছর একটানা সভাপতির পদে থাকা মজিবুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর বিরুদ্ধে এঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগ রয়েছে। সেভেন মার্ডারের পর পালিয়ে থাকা তাজিম বাবু ও সাদেকুর রহমানকে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় করা এই সভাপতি বলেন, ‘এঁদের মাইনাস করে আমি একা তো রাজনীতি করতে পারব না। এটা কি সম্ভব? রাজনীতি করলে তাঁদের তো লাগবে। একটা মামলায় পড়েছে, তাই তাঁরা একটু দূরে সরে আছে।’
এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার।