গৃহবধূর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন

Looks like you've blocked notifications!

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় পাপিয়া আক্তার (১৯) নামের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এতে পাপিয়ার শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। 

আজ শনিবার করিমগঞ্জের উলুখলা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। 

দগ্ধ পাপিয়াকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। তিনি মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের কৃষক নজির মিয়ার মেয়ে। আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ পাপিয়ার দেবর মাসেকুল হককে (২২) আটক করেছে।

পাপিয়ার পরিবারের লোকজন জানায়, দেড় বছর আগে করিমগঞ্জের উলুখলা গ্রামের আনোয়ারুল হকের ছেলে আশিকুল হকের সঙ্গে প্রেম করে পাপিয়ার বিয়ে হয়। কিন্তু আশিকের বাবা-মা ও পরিবারের অন্য লোকজন এ বিয়ে মেনে নেননি। এ কারণে বিয়ের পর থেকে পাপিয়ার ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালাতে থাকেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। শুধু তাই নয়, তাঁকে তালাক দিতে স্বামী আশিকের ওপরও চাপ দিতে থাকেন। আজ সকালে এসব বিষয় নিয়ে এলাকায় সালিস হওয়ার কথা ছিল।

উলুখলা গ্রামের এরশাদুল হক জানান, আজ সকালে উলুখলা গ্রামে পাপিয়া ও তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ঝামেলা নিয়ে সালিসের আয়োজন করা হয়েছিল। এ জন্য পাপিয়ার বাবা নজির মিয়া ও আরো কয়েকজন আত্মীয় উলুখলা গ্রামে অবস্থান করছিলেন। সালিস শুরু হওয়ার আগে পাপিয়ার শরীরে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ অবস্থায় সালিস আর হয়নি।

খালাতো ভাই শহীদুল ইসলাম পাপিয়ার বরাত দিয়ে জানান, পাপিয়া চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গ্রামে দরবার-সালিসের আয়োজন করায় পাপিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ হন। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেবর মাসেকুল হক ঘরের দরজা লাগিয়ে কাপড় দিয়ে পাপিয়ার মুখ ও হাত বেঁধে ফেলেন। শাশুড়ি পারুল আক্তার তখন পাপিয়ার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। তখন ঘরে শ্বশুর আনোয়ারুল হক উপস্থিত ছিলেন। তবে পাপিয়ার স্বামী আশিক ওই সময় উপস্থিত না থাকলেও এ ঘটনায় তাঁর ইন্ধন রয়েছে।

ঘটনার পর পাপিয়ার বাবা এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাঁকে প্রথমে করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। 

কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক পারভেজ আহমেদ জানান, ওই নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর মুখ, বুক, পিঠ, কোমরসহ শরীরের অন্তত ৯০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। তিনি জানান, কেরোসিন বা পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হতে পারে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। 

করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বজলুর রহমান জানান, ঘটনার পর পাপিয়ার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি পালিয়ে গেছেন। দেবর মাসেকুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। 

ওসি জানান, প্রাথমিক তদন্তে আগুন দেওয়ার ঘটনায় স্বামী আশিকের ইন্ধনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।