নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের মৃত্যুর দায়-দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই সেলিম ওসমান। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে একের পর এক মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরেই মানসিক যন্ত্রণায় নাসিম ওসমানের মৃত্যু হয়েছে।
 
আজ শনিবার বিকেলে শহরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারে নতুন গ্যাস সংযোগের উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান এ কথা বলেন।
 
অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান বলেন, ‘জনগণের গোলামি করতে এসেছি। আমার জীবনের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে আমি নারায়ণগঞ্জের গোলামি করতে এসেছি। কে কী বলল আমার তাতে কিছু আসে-যায় না। এই গোলামি করতে গিয়ে সবচেয়ে প্রথম আমি যেখানে বাধা পেয়েছি...একদিন আসব বুলডোজারের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। আমার সাথে খেলবেন না। এখনো সুযোগ আছে, ছোট বোন আইভী। টাকা জমা করে রেখে দেন। খাইয়া ফালাইয়েন না। পরের মেয়রের মাধ্যমে কাজ করব। খাইয়া ফালাইলে কিন্তু পেটের থেকে টাকা বাইর কইরা নিয়া আসমু। বহুত খেলছেন। মামলা-মোকদ্দমা কী হবে আমি জানি না। কিন্তু এখন থেকে আর খাবেন না। উন্নয়নের কাজ করেন। ইচ্ছা থাকলে আমার সাথে বসেন। ওই টাকা আপনার না। আমার টাকা আলী আহমেদ চুনকা (নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও সেলিনা হায়াত আইভীর বাবা) সাহেবের না। নারায়ণগঞ্জের মানুষের ট্যাক্সের টাকা। যদি জমায়ে রাখেন। রাখেন। আর না হইলে রাস্তায় নামেন, কাজ করেন। কাজ আমি দেখায়ে দেব। আমার গলাচিপায় রাস্তা নাই। শীতলক্ষ্যায় রাস্তা নাই। পাইকপাড়ায় রাস্তা নাই। ফাইজলামি পাইছেন নাকি। ফাইজলামি পাইছেন। জনগণের ভোট, কই আপনারে বাধা দেই নাই তো। আমি তো শামীম ওসমানের নির্বাচনে নামি নাই।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদপ্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার বর্জন করা প্রসঙ্গে সেলিম ওসমান বলেন, ‘আল্লাহ আপনেরে সুযোগ দিছিল, খালেদা জিয়া বেইমানি করছিল। তৈমুর সাহেবকে কোরবানি দিয়ে আপনারে মেয়র বানাইয়া দিছে। এ ছাড়া কোনো কারণ ছিল না। নারায়ণগঞ্জে মানুষ বোকা না, নারায়ণগঞ্জের মানুষ বুঝে। তৈমুর সাহেব নিজের জালে তো নিজে পড়ল, আবার বলে বিএনপি করে।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আরে, তৈমুর ভাই। আসেন, আসেন। বুড়া হইছেন। আসেন, আমার সঙ্গে রাজনীতি করেন, উন্নয়নের রাজনীতি। আর ওই ভুল পথে চইলেন না, তৈমুর ভাই। আর নারায়ণগঞ্জের ছেলেপুলেগো বেপথে নিয়েন না। আমার নারায়ণগঞ্জের ছেলেরা কাজ জানে। ভুল-ভ্রান্তি দূর করেন। আসেন আমরা উন্নয়নে কাজ করি।’

সেলিম ওসমান বলেন, ‘মেয়রের (সেলিনা হায়াৎ আইভী) বাড়ি যেতে চেয়েছি। নারায়ণগঞ্জের অনেকে জানেন। আমাকে নিষেধ করা হয়েছে, তাঁর বাড়িতে যাওয়ার জন্য। আমি তাঁর মায়ের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। আমি পৌরপিতা আলী আহমদ চুনকা সাহেবের কবর জিয়ারত করেছি। কোনো রাগ-দুঃখ নিয়ে আমি ছিলাম। আজকে যখন জনগণের কাজ করতে যাচ্ছি তখন প্রতিটা পদে আমার বাধা, বাধা, বাধা, বাধা। আমি নারায়ণগঞ্জ শহরের জাতীয় সংসদ সদস্য। কোনো কারণে ওনার (আইভী) বয়স আমার থেকে বেশি নয় এবং উনি আমার ওপরের পোস্ট বহন করেন না। আমি ওনার দপ্তরে নিজে গিয়ে একা গিয়ে উপস্থিত হয়েছি। মন্ত্রীরা আসলে ওনাকে আমি কার্ড পাঠিয়েছি, দাওয়াত দিয়েছি। উনি আমার একটি দাওয়াতেও আসেননি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পরে রোজার মাসে শপথ গ্রহণের পরে আমি নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে একটি ইফতার পার্টি দেই। নারায়ণগঞ্জের সকল স্তরের মানুষ, নেতা-কর্মী সেই ইফতার পার্টিতে এসেছেন। তাঁকে আমি কয়েক দফা দাওয়াত দেওয়ার পরও তিনি সেই ইফতার পার্টিতে আসেন নাই। কোথায় ওনার জ্বলুনি, আমি জানি না। আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে অনুরোধ করব, চেয়ারে বসে যদি কারো অহংকার হয়। যাকে বলে পিঁপীলিকার পাখা গজে মরিবার তরে। সামনে নির্বাচন। আপনারা মনোনয়ন দেন। আমাকে কাজ করার সুযোগ দেবেন। নারায়ণগঞ্জ ৪-এর একটি অংশ এবং নারায়ণগঞ্জ ৫-এর একটি অংশ এই সিটি করপোরেশনের সাথে জড়িত। আমরা দুটা ভাই কাজ করতে পারছি না।’

আইভীর উদ্দেশে সেলিম ওসমান বলেন, ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চালান উনি। একটা শিশু বাচ্চাকে (তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী) হত্যার কারণকে মোড় ঘুরিয়ে নাসিম ওসমানকে হত্যার দায়-দায়িত্ব ওনাকে নিতে হবে।’ 

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং বিকেএমইএর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মঞ্জুরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ বাদল, শাহ নিজাম, জেলা জাসদের সভাপতি আবদুস সাত্তার, কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না প্রমুখ।
 
সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ সব কিছু বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। আলোচনা সভা শেষে দুই সংসদ সদস্যসহ উপস্থিত অতিথিরা কবুতর উড়িয়ে নতুন গ্যাস সংযোগ লাইনের উদ্বোধন করেন।