শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বিদ্যালয়

Looks like you've blocked notifications!
জাজিরা এলাকায় পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের ভবন। ছবি : এনটিভি

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়ন এলাকায় থামছে না পদ্মার ভাঙন।  পদ্মার ভাঙনে ঘরছাড়া হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনটির অর্ধেকটা ভেঙে পড়ে নদীতে। চলতি বছরের ১৭ই ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয়েছিল ভবনটি।

গত আগস্ট মাসের শুরু থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ও বিলাসপুর ইউনিয়নের খেজুরতলা কলমিরচর চোকদার কান্দি, মমিন খালাসি কান্দি, হাজি মকবুল খালাসি কান্দি, রিয়াজ উদ্দিন মাদবর কান্দি ও ইয়াকুব মাদবর কান্দি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত দেড় মাসে কুণ্ডেরচর ও বিলাসপুর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের পাঁচটি মসজিদ, একটি উচ্চবিদ্যালয়, দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় দেড় হাজার পরিবার পদ্মার ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে।

ভাঙন হুমকিতে থাকা কুণ্ডেরচর ইসমাইল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনটি মঙ্গলবার রাতে ভেঙে পড়ে। এখন ভাঙনের অপেক্ষায় আছে একই স্থানের কুণ্ডেরচর হাসেম আলী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একই গ্রামের জামে মসজিদটি।

ভাঙন আতঙ্কে দুটি বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সামনে বার্ষিক, জেএসসি ও সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না বেশির ভাগ শিক্ষার্থী।

ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. নূরে আলম বলে, ‘আমাদের ঘরবাড়ি সব নদীতে ভাইঙ্গা গেছে। আমাগো আর কিছুই নাই। আমাগোর গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়টি এখন নদীতে চলে গেল।’

কুণ্ডেরচর হাসেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলী আকবর বলেন, ‘৩১ বছরে বিদ্যালয়টি ছয়বার ভেঙেছে। সব শেষে এলাকার লোকজন জমি কিনে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য দিয়েছে। পাশেই একটি উচ্চবিদ্যালয় হওয়ার পর একটি শিক্ষার পরিবেশ গড়ে উঠে। এখন এ বিদ্যালয় দুটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আমাদের আর কষ্টের সীমা থাকবে না। আমাদের পা রাখার মতো কোনো জায়গা থাকবে না। ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এরইমধ্যে আমাদের এ বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী অন্যত্র চলে গেছে।’

কুণ্ডেরচর ইসমাইল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার দত্ত বলেন, ‘চলতি বছর আমাদের বিদ্যালয়ে ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি  ভবনটির উদ্বোধন করা হয়। পদ্মার ভাঙনে বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে গেল। সামনে জেএসসি ও সমাপনী পরিক্ষা। পাশের গ্রামে জমি ইজারা নিয়ে টিনের ঘর তৈরি করে পাঠদান অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলছে।

শরীয়তপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক হাসান বলেন, ‘ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে কুণ্ডেরচর থেকে সুরেশ্বর পর্যন্ত প্রায় ৯কি মি এলাকায় স্থায়ী তীর সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’