‘মা, চিটাগাং থেকে ট্রলারে উঠে মালয়েশিয়া যাচ্ছি’
মা, আমি চিটাগাং থেকে ট্রলারে উঠতিছি, মালয়েশিয়া যাচ্ছি’- প্রায় এক মাস আগে ছেলে ইমরান শেখ ফোন করে মা হাসিনা বেগমকে এভাবেই জানিয়েছিলেন বিদেশ যাওয়ার কথা। এর পর থেকে আর ইমরানের কোনো খোঁজ নেই। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই বুক চাপড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসিনা বেগম। তিনি বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘বাবা, তোরা আমার ইমরানরে আইনা দে। দালালের খপ্পরে পড়ে আমার বাবা আমারে না কয়ে বিদেশে যাচ্ছিল।’
ইমরানের বাড়ি মাগুরার পৌর এলাকার ডেফুলিয়া গ্রামে। মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে এ গ্রামের তিন যুবক প্রায় এক মাস ধরে নিখোঁজ। নিখোঁজ তিন যুবকের সন্ধানে পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। নিখোঁজ অন্য যুবক হচ্ছেন ইমরানের মামাতো ভাই শাহিন বিশ্বাস (২২) ও ইমরানের প্রতিবেশী ইমরান মোল্লা (৩০)।
সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশিদের থাইল্যান্ডে আটকে নির্যাতন ও হত্যার পর গণকবর দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর নিখোঁজ যুবকদের পরিবারে চলছে আহাজারি।
ইমরানের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমার টাকা-পয়সার দরকার নেই, যে আমার বাবারে আনে দেবে তারে ঘরবাড়ি সব দিয়ে দেব।’ শুধু ইমরানের মা নয়, ভাই-বোন, দাদি, নানি, বাড়িতে আসা স্বজন সবাই ইমরানের ছবি নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ইমরানের ছোট ভাই রাজু শেখ জানান, ইমরান পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। প্রায় এক মাস আগে পাশের জেলা নড়াইলে কাজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর ওই দিনই রাজ্জাক নামে এক দালালের মাধ্যমে ইমরান, শাহিন ও ইমরান মোল্লা চট্টগ্রাম যান।
রাজ্জাকের বাড়ি ঝিনাইদহের হাটগোপালপুর। পরদিন মোবাইলে তাঁরা জানান, তাঁরা তিনজন সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। এ কথা বলার পর দালারা তাঁদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে নেয়। এর পর থেকে তাঁদের আর কোনো খোঁজ নেই।
রাজু শেখ আরো জানান, কয়েকদিন ধরে মোবাইলে যোগাযোগ করে তাঁদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করা হলে রাজ্জাক প্রথমে জানান, ইমরানদের চট্টগ্রামের দালালের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে তাঁরা (ইমরানরা) কোথায় আছেন সে খবর তিনি জানেন না। পরে বিভিন্ন সময় ফোনে রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি (রাজ্জাক) কখনো বলেন ইমরানরা সমুদ্রের মধ্যে আছে, আবার কখনো বলেন থাইল্যান্ডে গোপন গুহায় রাখা হয়েছে। সর্বশেষ তিনি বলেছেন, ইমরানরা না খেয়ে আছে, খাওয়ার জন্য টাকা লাগবে। এ জন্য রাজ্জাক জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। এখন রাজ্জাকের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
শাহিন ও ইমরান মোল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে একই অবস্থা। তাঁদের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। তবে শাহিন ও ইমরান মোল্লার পরিবারের সদস্যরা জানান, এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হোক সেটা তাঁরা চান না। যে কারণে সাংবাদিকদের সাথে তাঁরা কথা বলতে চান না। সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার খবর প্রচারিত হলে দালালরা ইমরানদের হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দেবে বলে শাহিন ও ইমরান বাড়িতে বলে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা দলিল উদ্দিন বলেন, দালালের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে তিন যুবকই ভুল করেছে। যুবকদের সঠিক অবস্থান বের করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবাসীকল্যাণ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার মো. নাকিব হাসান তরফদার এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘মালয়েশিয়াগামী সদরের ডেফুলিয়া গ্রামের নিখোঁজ তিন যুবকের ব্যাপারে আমাদের কেউ অবহিত করেনি। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি পরিবারকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’