সাংবাদিক ও কলামিস্ট রণেশ মৈত্রর ৮৩তম জন্মদিন আজ
প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ রণেশ মৈত্রর ৮৩তম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার। মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন জনস্বার্থের আন্দোলনে তিনি সব সময়ই সাহসী ভূমিকা রাখেন।
১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর তাঁর মাতামহের চাকরিস্থল রাজশাহী জেলার নহাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রণেশ মৈত্র। বাবা রমেশ চন্দ্র ছিলেন পাবনার আতাইকুলা থানার ভুলবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।
সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই রণেশ মৈত্র টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালান। নিজ জীবন-সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়েই রণেশ মৈত্র দেশের অসহায়, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেন।
১৯৫০ সালে জিসিআই স্কুল থেকে রণেশ মৈত্র ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৮ সালে ছাত্র ইউনিয়নের হয়ে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক জীবন।১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি পাবনা জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন। সে বছরই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে রণেশ মৈত্র বাংলাদেশ অবজারভারের আবদুল মতিন, কামাল লোহানীসহ প্রগতিশীল বন্ধুদের সঙ্গে গঠন করেন শিখা সংঘ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। যে সংগঠনের একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল, সেখান থেকে শিখা নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকাও প্রকাশিত হতো।
ভাষা আন্দোলন, ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তিনি বহুবার কারাবরণ করেন। ১৯৫৫ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপে যোগ দেন। পরে ১৯৬৭-এর দিকে তিনি মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন রুশপন্থী ন্যাপে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন তিনি ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুরুল কাদের খান জেলার প্রগতিশীল বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটিরও রণেশ মৈত্র ছিলেন একজন অন্যতম সদস্য। ১৯৯৩ সালে তিনি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে গণফোরামে যোগ দেন এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। তিনি দীর্ঘদিন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৩ সালে ঐক্য-ন্যাপে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ঐক্য-ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য।
১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তাঁর সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়। এরপর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ এবং ১৯৬৭ থেকে তিনি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারে পাবনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি দি ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে একজন ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশের শীর্ষ পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে সারা দেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন।
১৯৬১ সালে পাবনায় পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রণেশ মৈত্র। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা তাঁদের পেশার স্বীকৃতি পান। তিনি সে বছরেই প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জেলার সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সফল আইনজীবী হিসেবেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন রণেশ মৈত্র। পরে আইন পেশা থেকেও স্বেচ্ছায় অবসর নেন তিনি। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ রুদ্র চৈতন্যে বিপন্ন বাংলাদেশ পাঠক মহলে সমাদিত হয়েছে। তাঁর ৭৭তম জন্মদিনে প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থ ‘নিশঙ্ক পথিক রণেশ মৈত্র’ তাঁর জীবনের ওপর বিভিন্নজনের এক বর্ণিল চিত্রগাঁথা।