পঞ্চগড়ে ১০ টাকা কেজির চাল যাচ্ছে বিত্তবানদের ঘরে!
‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ স্লোগানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় পঞ্চগড়ে হতদরিদ্র ও দুঃস্থদের জন্য ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রির তালিকা প্রণয়ন ও চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আর বাছাই কমিটির সদস্যদের স্বজনপ্রীতির কারণে দুঃস্থদের এই চাল যাচ্ছে বিত্তবানদের ঘরে। সেই সঙ্গে ডিলারদের বিরুদ্ধেও রয়েছে ওজনে কম দেওয়াসহ নানা অভিযোগ।
অনেক বিত্তবান আবার লোকলজ্জার ভয়ে ৩০ কেজি চাল কিনছেন দরিদ্র কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে, পারিশ্রমিক হিসেবে দিচ্ছেন তিন কেজি চাল। ১০ টাকা দরে চাল কিনে সঙ্গে সঙ্গে আবার ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন ৩০ টাকা কেজিদরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড দেওয়া হয়েছে আবদুল করিম নামের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কার্ড দেওয়া হয়েছে আনারুল ইসলাম, সহিদুল ইসলাম, তহিদুল ইসলাম, আজুল প্রধান, আবুল প্রধানকে, যাঁরা সবাই ব্যবসায়ী। এ ছাড়া আতাউর রহমান নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নিয়েছেন এ চাল।
৯ নম্বর ওয়ার্ডে আতাউর রহমান নামের একজন জাসদ নেতা তাঁর পরিবারের ১১ জন সদস্যের নামে কার্ড নিয়েছেন।
এদিকে, সদর ইউনিয়নের ডুডুমারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ৫০টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ১০ টাকা কেজির কার্ড পেয়েছেন মাত্র পাঁচজন। এভাবে দুঃস্থদের না দিয়ে বিত্তবানদের কার্ড হওয়ায় দুঃস্থদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ডুডুমারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার একটা মেয়ে প্রতিবন্ধী, আমার শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে পড়ে আছেন। আমাদের আটজনের সংসার অথচ আমাদের ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড হলো না। আমাদের পাশেই যাদের পাকা বাড়িঘর আছে, সারা বছর ঘরের ধানের ভাত খায়, মেম্বার তাদের কার্ড দিল। আমরা কী অপরাধ করলাম?’
মাহানপাড়া এলাকার সত্তরোর্ধ্ব জঙ্গলু মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি বয়সের ভারে চলতে পারি না, কাজ-কাম করতে পারি না। আমাকে একটা ১০ টাকা কেজির কার্ড দিল না। অথচ কার্ড দিল বিল্ডিং বাড়ি আছে এই রকম লোকদের।’
এদিকে, ওজনে চাল কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর ইউনিয়নের ডিলার হায়াতুল করিম মামুনের বিরুদ্ধে।
ডুডুমারী এলাকার নফিজল হক বলেন, ‘আমরা উচিত টাকা দিয়ে চাল কিনেছি কিন্তু বাড়িতে গিয়ে দেখি দেড় থেকে দুই কেজি করে চাল কম দিয়েছে। ডিজিটাল পাল্লার (পরিমাপক যন্ত্র) ওপর চালের সঙ্গে অতিরিক্ত একটা করে চটের বস্তা দিয়ে আমাদের চাল দেওয়া হয়েছে।’ একই কথা বলেন হজরত আলী ও সলেমান আলী।
এ ব্যাপারে ডিলার হায়াতুল করিম মামুন বলেন, ‘আমি কখনোই চাল কম দেইনি তবে প্রথমদিকে ডিজিটাল পাল্লার হিসাব আমার লোকজনরা বুঝতে না পেরে একটা চটের বস্তা দিয়ে কয়েকজনকে চাল দিয়েছিল। পরে আমি তা নামিয়ে ফেলেছি।’
তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে পঞ্চগড় সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন জাহেদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা মুনতাজেরী দীনা বলেন, ‘আমরা কিছু কিছু এলাকা থেকে এই ধরনের অভিযোগ মৌখিকভাবে পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট এলাকায় অতিদ্রুত তদন্তসাপেক্ষে সঠিক তালিকা তৈরির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় এ বছর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এবং আগামী মার্চ ও এপ্রিল এই পাঁচ মাস জেলার প্রায় ৪৭ হাজার পরিবার ১০ টাকা কেজিতে মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন। এ জন্য জেলার পাঁচ উপজেলা ও দুটি পৌরসভায় ৯২ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে।