কাউকে কি জবাবদিহি করতে হবে না : খালেদা জিয়া
দলীয় নেতা-কর্মীদের ‘গুম-খুন’ আর নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রশ্ন তুলেছেন, এসব ঘটনার জন্য কাউকে কি জবাবদিহি করতে হবে না? পাশাপাশি দেশে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিকতা ‘বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে’ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর।
গত ১০ মার্চ উত্তরা এলাকার একটি বাসা থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তার পর থেকেই নিখোঁজ আছেন বিএনপির এই নেতা।
আজ শনিবার এ ঘটনার দুই মাস পূরণ হলো। বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ইলিয়াস আলীসহ নেতাকর্মী নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁদেরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
urgentPhoto
বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সালাহ উদ্দিনের জন্য তাঁর পরিবারের এবং আমাদের সকলের উৎকণ্ঠা দিন দিন আরো গভীর হচ্ছে। আমরা বারংবার তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করে আসছি। তাঁর স্ত্রী, প্রাক্তন সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বারবার আবেদন করছেন তাঁর স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে নিষ্ঠুর কটাক্ষ করলেও তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেননি।’
‘সালাহ উদ্দিনের বিষয়ে তাঁর স্ত্রী থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেওয়া হয়নি। যদিও পুলিশ নিজে থেকে একটা জিডি করেছে, কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও তাঁর সন্ধান আজও দেওয়া হয়নি।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন বিএনপির মতো একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তাঁর মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ নাগরিককে দীর্ঘদিন গায়েব করে রেখে যদি সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন নির্বিকার থাকতে পারে তাহলে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথায়? দেশে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিকতা কি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে? কাউকে কি কখনো কোনো কিছুর দায় নিতে বা জবাবদিহি করতে হবে না?’
সালাহ উদ্দিনকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সকল নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। দাবি জানাচ্ছি, সর্বস্তরে স্বেচ্ছাচারিতার বদলে আইনের শাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক রীতি-নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হোক। দাবি করছি, আইনের প্রয়োগ, তদন্ত ও বিচারিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্যের অবসান ঘটিয়ে শৃঙ্খলা ও নিয়ম-নীতি ফিরিয়ে আনা হোক।’
শেখ হাসিনার লাগাতার দুই আমলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা ইলিয়াস আলী, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম, সাবেক সংসদ সদস্য ও লাকসাম বিএনপির নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন কবির পারভেজ এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন ও সিলেটের ছাত্রনেতা ইফতেখার আহমদ দিদারসহ বিরোধী দলের বহু নেতা-কর্মীকে বলপূর্বক গায়েব করে ফেলা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বিবৃতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘গুম করে ফেলা এসব নেতা-কর্মী ও নাগরিকদের স্বজনেরা তাঁদের প্রিয়জনের ফিরে আসার প্রত্যাশায় উৎকণ্ঠার প্রহর যাপন করছেন। তাঁরা জানেন না তাঁদের নিখোঁজ স্বজনেরা আটক অবস্থায় বিনা বিচারে হত্যার শিকার হয়েছেন কি না। খুনের শিকার হয়ে থাকলে সেই খুনের বিচার দূরে থাকুক, লাশটি পর্যন্ত তাঁরা পাননি। জানতে পারেননি মৃত্যুর তারিখটিও। সুযোগ পাননি প্রিয়জনের লাশ দাফন, কবর জিয়ারত কিংবা মৃত্যু দিবসে দোয়া খায়ের ও মাগফিরাত কামনা করার।’