সাবেক ছিটমহলে উন্নয়নের লক্ষ্য মুর্শিদার
এক সময় তাঁর এলাকাকে বলা হতো ‘ছিটমহল’। এখন ওই শব্দটি ইতিহাস। বহুদিন লাগেনি এসব এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া। মোছা. মুর্শিদা আক্তার সাবেক ছিটমহলেই জন্মেছেন, বেড়ে উঠেছেন। এখন ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন। এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চান।
পঞ্চগড়, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় ছিল মোট ৩৬টি ছিটমহল। ছিটমহল বিলুপ্ত হওয়ার পর এ সব এলাকাকে আটটি ইউনিয়নে ভাগ করা হয়। আগামী ৩১ অক্টোবর এ সব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ওই আটটি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে একজন নারী প্রার্থী। তিনিই মোছা. মুর্শিদা আক্তার। বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
স্বতন্ত্র এ প্রার্থীর প্রতীক ঘোড়া। একদল নারী কর্মীর পাশাপাশি পুরুষ কর্মীদের নিয়ে সব ধরনের সামাজিক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে দিন রাত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মুর্শিদা। মোটরসাইকেল, ভ্যান আর সাইকেলের বহর নিয়ে এ গ্রাম থেকে ওই গ্রামের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন। পাড়ায় পাড়ায় চলছে বৈঠক। হাট-বাজারেও চলছে গণসংযোগ। নারী হিসেবে পিছিয়ে নেই এই চেয়ারম্যান প্রার্থী। ওই ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০৫। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৮ হাজার ৩০৫ জন। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভোটার মহিলা। নারী ভোটারদের পাশাপাশি পুরুষ ভোটাররাও তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই প্রার্থী। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, নির্বাচনে জয়ী হয়ে চমক দেখাতে পারেন মুর্শিদা।
নাজিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেনের মেয়ে মোছা. মুর্শিদা আক্তার। নাজিরগঞ্জ এলাকাটি ছিল এক সময় ছিটমহল। মুর্শিদার বাবা মোশাররফও এখন বেঁচে নেই। কালিয়াগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন মুর্শিদা। জেলার বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের পেয়াদাপাড়া এলাকার মো. ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে ২০০৩ সালে বিয়ে হয় মুর্শিদার। পেশায় মুর্শিদা একজন পল্লী চিকিৎসক। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সদস্য।
কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার নারী কর্মী আনোয়ারা বেগম, সুই পাড়া এলাকার বিউটি বেগম ও বানিয়াজোত গ্রামের দয়া রানী জানান, নারীদের অনেক সমস্যা আছে যেগুলো মুখ ফোটে সবার কাছে বলতে পারেন না। আবার অনেক কারণেই নারীরা সমাজে তাদের অধিকার আদায় করতে পারেন না। নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে নারীরা সরাসরি সব বিষয়ে তাঁর কাছে বলা যাবে, তিনি নারীদের সমস্যার কথা শুনবেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী মোছা. মুর্শিদা আক্তার বলেন, ‘আমি সততা নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নির্বাচন করছি। আমি নিজেও দুর্নীতি করব না। এখানে নারী ভোটার বেশি। আমরা নারীরা একত্রিত হবো নারীদের যুদ্ধে আমরা জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।’
মুর্শিদা আরো বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবায় মনোনিবেশ করব। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ, ইভ টিজিং ও মাদকের বিষয়ে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।’