ভ্যান নিয়ে বিষ কেনার টাকা দিল সুদখোর!

Looks like you've blocked notifications!
স্ত্রী ও শিশু মেয়েকে নিয়ে আবদুল খালেকের এই ছবি এখন কেবল স্মৃতি। ছবি : সংগৃহীত

গ্রামের এক সুদখোরের কাছ থেকে উচ্চ সুদে দুই হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন ভ্যানচালক আবদুল খালেক (২৫)। দুই মাস পর সুদসহ ১২ হাজার টাকা দাবি করেন সুদখোর। তা না পারায় খালেকের ভ্যানটি বিক্রি করে দেন তিনি। ৩৫ হাজার টাকায় ভ্যান বিক্রি করে খালেকের হাতে ৫০ টাকা ধরিয়ে পরামর্শ দেন ‘বিষ’ খাওয়ার!

গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিষাক্ত কীটনাশক পান করেন খালেক। আজ বুধবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।

আবদুল খালেক পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের নতুন চাকলার কেকুপাড়ার হাফিজ উদ্দিনের ছেলে।

গতকাল জীবনধারণের একমাত্র সম্বল ভ্যানটি হারিয়ে স্ত্রী মহিদা খাতুনের কাছে দিনের সব ঘটনা খুলে বলেন খালেক। আর রাতে ঘুমের সময় মহিদার নাকে গন্ধ আসে কীটনাশকের। ওঠে দেখেন খালেক কীটনাশক পান করে অচেতন হয়ে আছেন। দ্রুত খালেককে পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি খালেককে।

মহিদা জানান, খালেক দুটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কেনেন। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচ করে ঋণের কিস্তি দিতেন খালেক। খুব দরকার পড়লে দুই মাস আগে চাকলাহাট ইউনিয়নের ভান্ডারু গ্রামের সুরুত জামালের কাছ থেকে উচ্চ সুদে দুই হাজার টাকা ধার নেন খালেক।

দুই মাসে সুদের টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজারে। সুরুত জামাল ওই  টাকা পরিশোধের জন্য নিয়মিত চাপ দিতে থাকেন। গত মঙ্গলবার রাতে খালেক টুনিরহাট বাজারে ভ্যান নিয়ে যান। সেখানে সুরুত জামাল ও স্থানীয় বাসিন্দা ফজু মিলে ভ্যানটি আটক করেন। ৫০ হাজার টাকা দামের ভ্যানটি তাঁরা ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। সুরুত জামাল নিজের দুই হাজার টাকার সুদে আসলে ১২ হাজার টাকা আদায় করেন। অবশিষ্ট টাকা খালেকের অন্য পাওনাদার ফজুসহ অন্যরা ভাগ করে নেন। এরপর ৫০ টাকার একটি নোট খালেকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিষ কিনে খাওয়ার কথা বলেন সুরুত জামাল। দুঃখে-কষ্টে খালেক বাড়ি ফিরে এসে স্ত্রীকে ঘটনাটি জানান।

মহিদা ও খালেকের একটি ছোট মেয়ে আছে। খালেকের এমন চলে যাওয়ায় মা-মেয়ের আহাজারি থামছে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দাফন করার খরচটুকু ওই পরিবারের নেই। এলাকার লোকজন মিলে টাকা সংগ্রহ করে খালেকের দাফনের ব্যবস্থা করে।

খালেকের স্ত্রী মহিদা খাতুন আরো বলেন, ‘সুদখোর সুরুত জামাল আমার স্বামীর ভ্যানটি আটক করে বিক্রি করে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। বাজারের মধ্যে আমার স্বামীকে লাঞ্ছিত করেছে। এই দুঃখে-কষ্টে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম জানান, সুরুত জামাল উচ্চ হারে সুদ খায়। শতকরা দৈনিক ১০ টাকা তাকে সুদ দিতে হয়। সকালে ১০০ টাকা নিলে সন্ধ্যায় ১১০ টাকা দিতে হয়।

আবদুল খালেকের বাবা হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘দুই হাজার টাকার সুদ ১২ হাজার টাকা! ওরা কি মানুষ! সুদখোররা মোর (আমার) ছোয়াটাক (ছেলেটাকে) মারে ফেলাইল।’

এ ব্যাপারে সুরুত জামালের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। প্রথমে জামালের স্ত্রী ফোন ধরলেও পরে তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

চাকলাহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।  

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।