ফিরতে সময় লাগবে সালাহ উদ্দিনের, হতে পারে কারাদণ্ড
৬৩ দিন পর খুঁজে পাওয়া গেলেও এখনই দেশে ফিরতে পারছেন না বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে কমপক্ষে তিন মাসের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর। গত সোমবার মেঘালয়ের শিলং থেকে আটকের পর তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করে পুলিশ।
ভারতের পাসপোর্ট আইন ১৯৫০-এর ৩ ও ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, দেশটিতে অবৈধভাবে কোনোরকম কাগজপত্র ছাড়া প্রবেশ বা প্রবেশের চেষ্টা করলে তিন মাস বা তার বেশি কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড পেতে পারেন।
এ ছাড়া ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারা অনুযায়ী, অন্য কোনো দেশের নাগরিক যদি অনুমোদিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ভারতে অবস্থান করেন, তাহলে তাঁর পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে।
বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশের ঘটনায় সালাহ উদ্দিন আহমেদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এনটিভিকে জানান শিলং টাইমস পত্রিকার সম্পাদক মানস চৌধুরী। এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে মানস বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা অনেক দিন লাগবে। চট করে উনি ছাড়া পাবেন না। ফ্যামিলি মেম্বার যেতে পারে, গিয়ে দেখা করতে পারে, সেটা অলরাইট। কিন্তু ছাড়িয়ে আনতে পারবে না এখন।’
ভারতের আইনে মামলা হওয়ার পর সালাহ উদ্দিন আহমেদের দেশে ফেরা নিয়ে বেশ একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বোঝাই যাচ্ছে যে, ওইখান থেকে সালাহ উদ্দিন সাহেব আর সহজে আসছেন না। ওখানে আগে ওনার ওয়াইফ যাক, তারপর কী করা যায়, সে ব্যবস্থা আমরা নেব। প্রয়োজনে আমরাও সেখানে যাব।’
আইনগত বাধা কীভাবে মোকাবিলা করবেন তা জানতে চাইলে বিএনপিপন্থী এই আইনজীবী বলেন, ‘ভারতের আইন অনুযায়ী বেইল পিটিশন (জামিন আবেদন) করতে হবে। যেহেতু ফরেনার অ্যাক্ট অনুযায়ী তাঁকে (সালাহ উদ্দিন) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপর কোর্টে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি এইভাবে ভিক্টিমাইজড, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর জামিন চাওয়া হবে, আদালত জামিন দিলে সে আদেশ অনুযায়ী তাঁকে বাংলাদেশে আনা যেতে পারে।’
‘সেজন্য ওখানে আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে। দেশে ফিরিয়ে আনতে এক সপ্তাহও লাগতে পারে, ১৫ দিনও লাগতে পারে। সেটা নির্ভর করছে আইনগত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কত সময় লাগছে তার ওপর। সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজতে আমরা সরকার বরাবর যেসব দরখাস্ত দিয়েছি, পত্রপত্রিকায় যেসব প্রতিবেদন এসেছে, সেগুলো আমরা নিয়ে যাব। সেগুলো দেখার পর হয়তো তাঁর মুক্তি বা জামিনের বিষয়টি সহজ হতে পারে।’ যোগ করেন সানাউল্লাহ মিয়া।
এদিকে ভিসা পাওয়া মাত্রই স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানিয়েছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। আজ বুধবার সকালে গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি। সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।
গতকাল মেঘালয় থেকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে পাওয়ার কথা জানায়। সেখানে জানানো হয়, শিলংয়ের রাস্তায় ইতস্তত ঘোরাঘুরি করার সময় সন্দেহজনক হিসেবে তাঁকে আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য মিমহ্যানস হাসপাতাল ও পরে শিলং সিভিল হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। এ ছাড়া পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে প্রবেশ করায় তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে প্রবেশ আইনে মামলা করেছে মেঘালয় পুলিশ। তবে মামলা হলেও হাসপাতালে থাকায় তাঁকে এখনই আদালতে ওঠানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রাজ্যটির পুলিশ কর্মকর্তারা।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের শিলং পুলিশের হাতে আটক হওয়ার খবর প্রথম ছেপেছিল শিলং টাইমস। টেলিফোনে পত্রিকার সম্পাদক এবং মেঘালয়ের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও দুবারের বিধায়ক মানস চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশ জানিয়েছে, উনাকে (সালাহ উদ্দিন আহমেদ) পাওয়া গেছে অজানা-অপরিচিত জায়গার মধ্যে। উনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ করায় উনি কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। তার পর লোকদের সন্দেহ হওয়ায় লোকেরা পুলিশকে ডেকে নিয়ে আসে। পুলিশ এসে উনাকে নিয়ে যায় থানায়।’
মানস চৌধুরী আরো বলেন, ‘এরপর পুলিশ জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে? উনি বললেন, আমি জানি না। আমাকে গাড়িতে করে এখানে চোখ বাঁধা অবস্থায় এনে ফেলে গেছে। পুলিশ বলল, আপনি কোথা থেকে আসছেন? উনি বললেন, আমাকে তো দুই মাস ধরে আটক করে রেখেছিল, বন্দী করে রেখেছিল। আমাকে কে বা কারা বন্দী করেছিল, আমি জানি না। আমি বন্দী অবস্থায় ছিলাম, আমাকে গাড়িতে করে চোখ বেঁধে এখানে নিয়ে এসে ফেলে গেছে। এটুকুই উনি বক্তব্য রেখেছেন।’
গত ১০ মার্চ থেকে ‘নিখোঁজ’ ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তাঁর পরিবার ও দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
তবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করা হয়নি বলে বারবার দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।