শত বর্ষেও সচেতন লাবণ্য রাণী দত্ত

Looks like you've blocked notifications!
ভোট দেওয়ার পর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের বড়ভাগ গ্রামের বাসিন্দা লাবণ্য রাণী দত্ত। ছবি : এনটিভি

বয়সের কারণে শতবর্ষী লাবণ্য রাণী দত্ত চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়েছেন বহু আগে। চোখের দৃষ্টিশক্তিও নেই বললেই চলে। অন্যকে অবলম্বন করেই চলে তাঁর প্রতিদিনের কাজ। আজ সোমবারও তার ব্যতিক্রম হলো না।

নাতি মানিক চন্দ্র দাস ও প্রতিবেশী বাবুলের সহায়তায় অনেক কষ্ট সহ্য করে লাবণ্য রাণী দত্ত রওনা হন আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বড়ভাগ এমদাদুল উলুম আলিম মাদ্রাসায়। উদ্দেশ্য মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ।

গত ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট গণনাকালে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটায় ফলাফল স্থগিত করা হয়। স্থগিত হওয়া ওই কেন্দ্রে আজ সাধারণ সদস্য পদে পুনরায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

শারীরিক সক্ষমতা হারালে কী হবে, উপনির্বাচনেও লাবণ্য রাণী দত্ত কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে ঠিকই হাজির হন। এ সময় অস্পষ্ট কণ্ঠে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি কে হবেন সে বিবেচনায় আমার মতো প্রতিটি ভোটই গুরুত্বপূর্ণ। নেতা নির্বাচনে সবাইকে বুঝে-শুনে ভোট দেওয়া উচিত।’

লাবণ্য রাণী দত্তের ভোট কেন্দ্রে আসার বিষয়টি নজর কাড়ে নির্বাচনী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সবাইকে।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল আলম এবং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার প্রকৌশলী মো. আমিনুর রহমান ভুইয়া বলেন, শতবর্ষী লাবণ্য রাণীর ভোটদানে আগ্রহের বিষয়টি তাঁদের  মুগ্ধ করেছে। ভোট প্রদানে সবাই এ রকম সচেতন হলে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন সহজতর হতো।

জাতীয় পরিচয়পত্রে লিখিত বিবরণ অনুযায়ী লাবণ্য রাণীর জন্ম তারিখ ১৯১৭ সালের ১০ জানুয়ারি। সে হিসেবে শত বর্ষের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন তিনি। যদিও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দাবি,তাঁর বয়স কমপক্ষে ১১৫ বছর।

সুরেন্দ্র দত্তের কন্যা শতবর্ষী লাবণ্য রাণী দত্তের জন্ম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের বাকচান্দা নারায়ণপুর গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে। ১৫-১৬ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের বড়ভাগ গ্রামে গোপীনাথ চন্দ্র দত্তের সঙ্গে লাবণ্য রাণীর বিয়ে হয়। পান ব্যবসায়ী গোপীনাথ চন্দ্রের মৃত্যু হয় ১৫ বছর আগে।

লাবণ্য রাণীর তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ে মারা গেছেন। বর্তমানে লাবণ্য রাণী দত্তের ২২ জন নাতি ও আটজন পুতি রয়েছে।

পুত্র, পুত্রবধূ, মেয়ে ও জামাতা, নাতি-নাতনি ও পুতিসহ চার প্রজন্ম মিলিয়ে বিশাল এই সংসারের মধ্য মনি এখন লাবণ্য রাণী দত্ত। নিজ নিজ ব্যক্তিগত ও সাংসারিক ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর সুযোগ সুবিধার দিকে নজর রাখতে ভুলেন না পরিবারের সদস্যসহ স্বজনরা। তাদের সবার কামনা তাদের মাঝে আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন শতবর্ষী লাবণ্য রাণী দত্ত।