রাবি শিক্ষক হত্যায় অভিযোগপত্র

‘মূল হোতা’ শরিফুল না থাকায় হতাশ রেজাউলের স্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা। বিচারের ক্ষেত্রে আশার আলোও দেখছেন তিনি। তবে হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ রাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম আইনের আওতায় না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

‘নব্য জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি)’ সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদ অধ্যাপক রেজাউল হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক। পুলিশ বলছে, তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাঁকে আইনের আওতায় আনতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাঁকে ধরতে দুই লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। এরপরও তাঁর সন্ধান মেলেনি।

রাবি শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণের দিন তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। শরিফুল ইসলামের বাড়িও একই উপজেলায়। তা ছাড়া শরিফুল যে বিভাগে পড়াশোনা করতেন, অধ্যাপক রেজাউল ছিলেন ওই বিভাগের শিক্ষক। এ জন্য রেজাউল করিমের সঙ্গে শরিফুলের সম্পর্কও ভালো ছিল।

হোসনে আরার ভাষায়, ক্যাম্পাসে অধ্যাপক রেজাউল ছিলেন শরিফুলের ‘স্থানীয় অভিভাবক’। তবে শরিফুল কখনো তাদের বাসায় আসেননি। এই শরিফুলই জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পর সংস্কৃতিমনা শিক্ষক রেজাউলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাঁর পরিকল্পনা মতেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।

অধ্যাপক রেজাউল করিমকে গত ২৩ এপ্রিল ভোরে নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার গলির ভেতর কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর থানায় মামলা হলে বিভিন্ন সময় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের মধ্যে থেকে রাবির এক শিক্ষার্থী কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক জানান, হত্যার ছয় মাসেরও বেশি সময় পর আজ মঙ্গলবার আদালতে আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গৃহীত হয়েছে। এঁদের মধ্যে বগুড়ার শিবগঞ্জের মাসকাওয়াত হাসান সাকিব ওরফে আবদুল্লাহ, রাজশাহীর খড়খড়ি এলাকার আব্দুস সাত্তার ও তাঁর ছেলে রিপন আলী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রহমত উল্লাহ কারাগারে আছেন। তাঁরা হত্যায় জড়িত থাকার ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বাগমারার শরিফুল পলাতক। অপর তিন ‘জঙ্গি’ বগুড়ার খাইরুল ইসলাম বাঁধন, পঞ্চগড়ের নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান ও জয়পুরহাটের ওসমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন।

পরিদর্শক রেজাউস সাদিক বলেন, ‘আটজনের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও তিনজন মারা গেছে। তাই বিচার হবে পাঁচজনের। এঁরা সবাই জেএমবির সদস্য। হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছিল জেএমবি। তবে এ মামলার পর আটক ১১ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন। যদিও এদের মধ্যে থেকে অভিযোগ আনা হয়েছে চারজনের নামে। তদন্তে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাকি সাতজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তারা এখন আইনি প্রক্রিয়ায় কারাগার থেকে বের হবে। হত্যার অভিযোগ থেকে অভিযোগপত্রেই তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

অধ্যাপক রেজাউলের স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, ‘আমি চাই কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন অভিযুক্ত না হয়। পুলিশের ওপর আমার আস্থা আছে। কারাবন্দি যে সাতজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা নিশ্চয় হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে আমার একটিই দাবি, শরিফুলকে আইনের আওতায় আনা হোক। কারণ, তাঁর পরিকল্পনাতেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। শরিফুল এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা হতাশ। তবে এটুকু স্বস্তি পাচ্ছি যে, অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ার মধ্য দিয়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো। এখন চাই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হত্যা মামলাটির বিচার কাজ দ্রুত শেষ করা হোক।’

হোসনে আরা আরো বলেন, মামলার তিন আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়ায় তিনি খুশি হতে পারেননি। তাদের গ্রেপ্তার করে জনসম্মুখে হাজির করা হলে তিনি বেশি খুশি হতেন। তাহলে জাতি তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারত। হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ শরিফুল যেন কোনোভাবেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা না পড়েন, এটাও চান তিনি।

এ দিকে অধ্যাপক রেজাউল হত্যার পরের দিনই শরিফুল ভারতে পালিয়ে গেছেন- এমন সংবাদ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। শরিফুলের বাড়ি বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। বাবার নাম আব্দুল হাকিম।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘শরিফুলকে ধরতে আরএমপির পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব ধরনের চেষ্টা আমরা করছি।’