নির্বাচনকালীন বিশেষ সরকার প্রয়োজন
বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র জনগণের আস্থা হারিয়েছে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। ভারতে দুই মাস ধরে নির্বাচন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে দুই মাস পর যখন ভোট গণনা হয়, তখন তা নিয়ে ভোটসংখ্যা কমে যাওয়ার কোনো অভিযোগ ওঠে না। অথচ বাংলাদেশে ভোট গণনা নিয়ে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। আর এসব কারণেই বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন বিশেষ সরকারের প্রয়োজন রয়েছে। তবে সেটা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত এক ছায়া সংসদে আকবর আলি খান এসব কথা বলেন।
নির্বাচনের জন্য তিন ধরনের সরকারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলেও নিজের বক্তব্যে উল্লেখ করেন আকবর আলি। তিনি বলেন, ‘একটা হলো নির্বাচনকালে যে সরকার আগে ক্ষমতায় ছিল সেই সরকারই। যেহেতু জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত সেই সরকারই নির্বাচন পরিচালনা করবে। কিন্তু নির্বাচনকালে তাঁর আগের যেসব ক্ষমতা সেই সব ক্ষমতা সে প্রয়োগ করবে না। যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে, তারপর তার ওপরে কতগুলো নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে। এবং এই ব্যবস্থাতেই পৃথিবীর প্রায় সব দেশে নির্বাচন পরিচালিত হতে পারে।’
‘দুই নম্বর যেটা হতে পারে, সেটা হলো আলাদা একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে পারে। যেটা আমাদের ছিল। আদালতের নির্দেশে এবং আইন-সংসদের বিবেচনায় সেটা তুলে দেওয়া হয়েছে। আবার পাকিস্তানে কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার আছে। এই ব্যবস্থা বাংলাদেশে প্রবর্তনে অসুবিধা রয়েছে, তবে অসম্ভব না। কারণ সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন আরো দুই দফা নির্বাচন এভাবে হতে পারে।…তবে হাইকোর্ট কিন্তু বলেছেন অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যান (নিষিদ্ধ)। আপনি সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরও ব্যবস্থা করতে পারেন। এবং সেটা বেআইনি হওয়ারও কোনো কারণ নেই।’
এ ছাড়া প্রয়োজনে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে বলেও মত দেন এই সাবেক উপদেষ্টা। এতে সংবিধান সংশোধনের প্রযোজন নেই। তবে কিছু চুক্তির ভিত্তিতে সেটা করা সম্ভব বলে মনে করেন আকবর আলি খান।
অবশ্য এসব সরকারের ব্যবস্থা করলেই যে বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে তাও মনে করেন না আকবর আলি। তিনি বলেন, ‘শুধু নির্বাচনকালীন সরকারকে প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে চিন্তা করতে হবে যে যদি আমরা এভাবে নির্বাচন করি তাহলে এটা দেশের জন্য আত্মঘাতী হবে। সে জন্য আমাদের অনেক সংস্কার, অনেক পরিবর্তন করতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলো পর্দার অন্তরালে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেই আশার আলো দেখা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন সাবেক উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে মেনে নিতে হবে যে আমাকে কিছু ছাড় দিতে হবে এবং কিছু দিতে হবে। কাজেই এই দেওয়া-নেওয়ার প্রক্রিয়া যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে না হয়, তাহলে আমি অদূর ভবিষ্যতে কোনো গণতান্ত্রিক সমাধানের সম্ভাবনা দেখি না। এবং আমরা গত দশক যেভাবে অতিক্রম করেছি, হয়তো আগামী দশকেও একই অবস্থা বিরাজ করবে।’
আজকের ছায়া সংসদে সরকারি দল হিসেবে অংশ নেয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং বিরোধী দলে ছিল প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি।