আত্মসমর্পণ করছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা

Looks like you've blocked notifications!

সহিংসতা ও নাশকতার এক বা একাধিক মামলার আসামি হিসেবে আত্মগোপনে থাকা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জামায়াত নেতারা একের পর এক আদালতে আত্মসমর্পণ করছেন। গত তিন দিনে দলটির ৫৬ জন নেতাকর্মী আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁদের প্রত্যেকের নামে এক থেকে চারটি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। জেলার সব উপজেলা থেকেই জামায়াতের নেতাকর্মীরা আত্মসমর্পণ করছেন বলে জানান আইনজীবীরা। 

দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে আত্মসমর্পণ করে আইনি সুবিধা নেওয়ার জন্যই তাঁরা আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিয়েছেন। আত্মগোপনে থেকে এরই মধ্যে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন, কারো ব্যবসা-বাণিজ্য লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। কারো কারো পরিবারে নেমে এসেছে অশান্তি।

এ ব্যাপারে জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মো. আজিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রত্যেকের নামে মামলা থাকায় আত্মসমর্পণের বিষয়টি তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সংগঠন এতে কোনো বাধা দিচ্ছে না।’ 

কলারোয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর ৫৭  নেতাকর্মীর আত্মসমর্পণের বিষয়টি স্বীকার করে মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘মাদ্রাসার শিক্ষকরা গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং আগামী ঈদের ছুটির কথা মাথায় রেখে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁরা এবারের ঈদ খোলামেলাভাবে পরিবারের সঙ্গেই করতে চান। তার আগে তাঁরা প্রয়োজনে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেবেন।’

জেলা জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা আর পুলিশের তাড়া খেতে চাই না। তার থেকে ভালো জেলে গিয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়া।’ তাঁর মতো অন্য অনেকে একই কথা বলেন।

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য খায়রুল বদিউজ্জামান জানান, ‘সাতক্ষীরার আদালতে প্রতিদিনই জামায়াতের নেতাকর্মীরা আত্মসমর্পণ করছেন। আমার তিন মোয়াক্কেল সাতক্ষীরার আগরদাঁড়ির জামায়াত নেতা মওলানা লুৎফর রহমান, মো. নুরুজ্জামান ও আবু জাফর মঙ্গলবার আত্মসমর্পণ করেছেন।’ এর কয়েক দিন আগে আশাশুনি উপজেলার ১১ জামায়াত নেতা-কর্মী তাঁর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বলেও জানান এই আইনজীবী।

জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান জানান, গত সোমবার তাঁর মাধ্যমে সিরাজুল মুন্সি, সোলায়মান মেম্বার, মতিয়ার রহমান, আবদুল গফুরসহ  জামায়াতের ২৪ নেতাকর্মী আত্মসমর্পণ করেছেন। 

অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান জানান, তাঁর মাধ্যমে আবুবকর সিদ্দিক, আবদুল গফফার, রফিকুল ইসলাম, রমজান মিস্ত্রি, সাগর হোসেনসহ ১২ জামায়াতকর্মী আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। 
 
এর আগে ২০১৪ সালের ১০ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রম্মরাজপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মনিরুল ইসলাম বেলালী, সেক্রেটারি আবদুস সবুর ও মাদ্রাসাশিক্ষক মনিরুল ইসলাম ফারুকী আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার পরই সাতক্ষীরায় শুরু হয়ে যায় ভয়াবহ তাণ্ডব। সেদিন জামায়াত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে জামায়াত-শিবির ও আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ১৩ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর থেকে পর্যায়ক্রমে জেলাব্যাপী চলমান সড়ক অবরোধ, গাছকাটা, নাশকতা, হত্যা ও সহিংসতার ঘটনায় দেড় শতাধিক মামলায় হাজার হাজার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। অনেকের ঘাড়ে চাপে পাঁচ-ছয়টি পর্যন্ত মামলা।

এসব মামলায় জামায়াতদলীয় আসামিদের কেউ জনপ্রতিনিধি, কেউ মাদ্রাসাশিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ শ্রমিক, কেউ বা আবার কৃষক। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করা দূরে থাক, লাগাতার পুলিশি অভিযানের মুখে তাঁদের অনেকেই বাড়িছাড়া। নানা ক্ষতির মুখে পড়ে অনেকেই আবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতেও আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে লাগাতার পুলিশি অভিযানের মুখে সাতক্ষীরায় সহিংসতা কমতে কমতে এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে।

জামায়াতকর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবির ও বিএনপিকে হরতাল-অবরোধসহ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি।

জেলা পুলিশ কন্ট্রোল কক্ষ থেকে জানা গেছে, পুলিশি অভিযানে এ বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি মে পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে জামায়াতদলীয় নেতাকর্মীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হন পাঁচ শতাধিক জামায়াতকর্মী। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মওলানা আবদুল খালেকসহ প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতাও রয়েছেন ।

এদিকে, মামলার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কলারোয়ার কুশোডাঙ্গা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ রাজনীতি থেকে অবসরেরও ঘোষণা দেন।