নীলফামারীতে ঝড়,খোলা আকাশের নিচে বসবাস
নীলফামারীতে গতকাল শনিবার রাতে কালবৈশাখীর তাণ্ডবের পর খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল ও এক হাজার করে টাকা দেওয়ার দাবি করেছে।
শনিবার রাত ৮টার দিকে পুরো নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় কালবৈশাখী। ঝড়ের তাণ্ডব থামার পরই শুরু হয় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। এতে বেড়ে যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ও গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে। এ দুটি ইউনিয়নেই তিন হাজারের বেশি পরিবারের ১০ হাজার ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ঝড়ের কারণে হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে। রাস্তার ওপর গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় মাগুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান,শিলাবৃষ্টিতে পাট, বোরো ধান, মরিচ, ভুট্টা, আম, কাঁঠাল,লিচুসহ বিভিন্ন ফল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তরা এখন খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাগুরা ইউনিয়নের মিয়াপাড়া, খামাতপাড়া, তালপাড়া, ধনীপাড়া, মাস্টারপাড়া, তেলীপাড়া, বানিয়াপাড়া, দর্জিপাড়া, তাতীপাড়া, বালাপাড়া, কুটিপাড়া, কলেজপাড়া ও কাজীপাড়া এলাকায় ঝড়ের তাণ্ডবের চিহ্ণ স্পষ্ট। এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাইরে থেকে কাউকে এলাকায় প্রবেশ করতে দেখলেই মনে করছেন হয়তো ত্রাণ এসেছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই কিশোরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্দিকুর রহমান আজ রোববার দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, তিনি সকাল থেকে দুর্গত এলাকায় অবস্থান করছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল ও এক হাজার করে টাকা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় হুইপ শওকত চৌধুরী দুপুরে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে এক হাজার টাকা করে দেন তিনি।
মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাহার হোসেন দুলাল জানান, ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এখন চিঁড়া-গুড় বিতরণের কাজ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া ঝড়ে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। তাঁরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে ঝড়ের সময় থেকে পুরো জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
জেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) উপসহকারী প্রকৌশলী মির্জা রফিকুন নবী জানান, রাতে সৈয়দপুর পাওয়ার হাউস থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেছে। ঝড়ের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ে যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা আজ সারা দিন মেরামত করে দ্রুত পুনরায় সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে।