‘বিএনপি জামায়াত ঠেকাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জনধিকৃত বিএনপি জামায়াত ফরিদপুরের রাজপথে আর কোনো দিন আন্দোলন সংগ্রামে নামতে পারবে না। একমাত্র ছাত্রলীগই যথেষ্ট তাদের প্রতিহত করার জন্য। ফরিদপুরে বিএনপি জামায়াতের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
আজ রোববার ফরিদপুরের রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগ এমন একটি সংগঠন যে সংগঠন বেড রুম, ড্রয়িং রুম কিংবা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জন্ম নেয়নি। ছাত্রলীগ একটি ঐতিহাসিক ছাত্র সংগঠন। অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য আছে এই ছাত্র সংগঠনের। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগ সবার আগে অংশ নিয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে ছাত্র সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিরাজগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. মোহাম্মদ হাবিবে মিল্লাত, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক লিয়াকত সিকদার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। ছাত্র সমাবেশের উদ্বোধন ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মোখলেসুর রহমান সুমন, অলিউর রহমান, তৌহিদুল ইসলাম, শেখ রাসেল, খালেদা হোসেন মুন, সাইফুর রহমান সোহাগ, মেহেদী হাসান, জামাল হোসেন, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাহিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, মাইনুদ্দীন আহমেদ মানু, শওকত আলী জাহিদ, আবু নাঈম, সোহেল রেজা বিপ্লব, সাজবজাদ বাবু, শহর যুবদলের সভাপতি ফারহানসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা।
এদিকে ছাত্র সমাবেশ সফল করতে জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহ আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্ততি নেওয়া হয়। শহরের প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে তোরণ নির্মাণ, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডসহ শোভাবর্ধনের জন্য সব আয়োজন ছিল ছাত্রলীগের। ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, নয়টি উপজেলা থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে জড়ো হতে থাকেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বেলা সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠান স্থলে এসে পৌঁছান। অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে নিয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় মাইকে জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে। সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে বাংলাদেশ স্কাউটের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। গার্ড অব অনার দেওয়া শেষে বিশাল ছাত্র সমাবেশের মঞ্চে উঠেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী।
ছাত্র সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিগত ১৫ বছরে ছাত্রলীগ এমন একটি অনুষ্ঠান করতে পারেনি। করবেই বা কিভাবে। কারণ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের ফরিদপুর শাখার আজ ১৫ বছর কোনো কমিটি হয় না। প্রতিবছর যেখানে সম্মেলন হওয়ার কথা সেখানে যদি এক যুগেরও বেশি সময় কোনো কমিটি না হয় বা সম্মেলন না হয় তবে সেই সংগঠন সহজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। তারপরও আজ রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে ছাত্রলীগের যে ছাত্র সমাবেশ হচ্ছে এত বড় সমাবেশ বিগত দিনে কোনো ছাত্র সংগঠন করতে পারেনি। আজ হাজার হাজার ছাত্র এই সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে একটি কারণে আর তা হলো, ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের একটি নতুন কমিটির আশায়।
মন্ত্রী মঞ্চে উপস্থিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ফরিদপুরে ছাত্রলীগের একটি নতুন কমিটি করে দিন। তবেই ফরিদপুরে ছাত্রলীগ নতুন করে সুসংগঠিত হতে পারবে। ছাত্রলীগ এখানে হবে সবচেয়ে শক্তিশালী।’
মন্ত্রী আরো বলেন, জাতীয় ইতিহাস থেকে ছাত্রলীগের নাম কোনোদিন মুছে ফেলা যাবে না। এই রাজেন্দ্র কলেজ থেকে অনেক নামিদামি ছাত্রনেতার জন্ম হয়েছে যারা পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রলীগের জন্য ফরিদপুর জেলাও কিন্তু একটি ইতিহাস।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নিজের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি নিজেও এই রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র ছিলাম। আমার নেতৃত্বের সূতিকাগার হচ্ছে রাজেন্দ্র কলেজ। আজকের এই সুন্দর একটি অনুষ্ঠানে কারো দুর্নাম, বদনাম বা গিবত করতে চাই না। তবে একটি কথা বলতে চাই, আর তা হলো ফরিদপুরের মাটিতে বিএনপি জামায়াতের কোনো ভাত নেই। ফরিদপুরের কোনো স্থানে বিএনপি জামায়াত দাঁড়াতে পারবে না। ধ্বংসাত্মক রাজনীতি এখানে করার কোনো সুযোগ নেই। দেশের এই শত্রুদের মোকাবিলা করার জন্য আমার ছাত্রলীগ যথেষ্ট আর কাউকে প্রয়োজন নেই।’
ছাত্র সংগঠনগুলোকে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের প্রতিটি সদস্যকে অবশ্যই লেখাপড়ার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে সন্ত্রাস মাদক আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। শুধু মিছিল মিটিং করলেই হবে না।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি করার লক্ষে এই ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ২০০১ সালে কমিটি গঠনের পর গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের কোনো জেলা কমিটি গঠন করা হয়নি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ফরিদপুরে না আসতে পারায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ঢাকায় গিয়ে তাঁর সাথে পরামর্শ করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করার আশ্বাস দেন। তবে ফরিদপুর শহর ছাত্রলীগ, থানা ছাত্রলীগ, রাজেন্দ্র কলেজ, ইয়াছিন কলেজ এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেছেন।