ভাগ্য বদলাতে গিয়ে নিখোঁজ অর্ধশত যুবক

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : এনটিভি

ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে হবিগঞ্জের অর্ধশত যুবক এখন নিখোঁজ। গত দুই থেকে তিন মাস ধরে তাঁদের কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। মানবপাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়া এসব ভাগ্য বিড়ম্বিত নিখোঁজ যুবকের পরিবারে এখন শোকের মাতম। একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের বিদেশ পাঠাতে গিয়ে নিজের সর্বস্ব খুঁইয়ে এক রকম সর্বস্বান্ত পরিবারের সদস্যরা।

হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও চুনারুঘাট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলকে নিজেদের ব্যবসার জন্য নিরাপদ জোন হিসেবে বেছে নিয়েছে দালালচক্র। দরিদ্র পরিবারগুলোর সন্তানদের সহজে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলা সম্ভব বলেই তারা কৌশল হিসেবে এসব অঞ্চল বেছে নেয়। অল্প খরচে বিদেশ গিয়ে অধিক আয় ও উন্নত জীবন-যাপন করার প্রলোভন দেখায় দালাল চক্র। তাদের মিষ্টি কথায় সহজেই বিশ্বাস আনে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে। আর এ সুযোগই তারা গ্রামের যুবকদের বাগে আনতে কাজে লাগায়। আর বিদেশে লাখ লাখ টাকা কামানোর প্রলোভোন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় কৌশলে আবার কখনো বা চাপ প্রয়োগ করে  দুই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে নেয় দালালরা। 

এসব দালালচক্রের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্তের টেকেরঘাট গ্রামের আব্দুল গণির ছেলে হিরাই (বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে), বাচ্চু, মঞ্জব আলীর ছেলে মাসুক, আব্দুল আলী, মৃত সুরুজ আলীর ছেলে জিয়াউদ্দিন, আব্দুন নুর ওরফে কন্টই মোল্লার ছেলে আব্দুল কাদির।

পুত্রশোকে পাগলপ্রায় চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের দীঘিরপাড় গ্রামের নিখোঁজ জসিমের বাবা আব্দুল হাই। তিনি জানান, তাঁর ছেলেকে জিম্মি অবস্থায় রেখে নির্যাতন করে স্থানীয় টেকেরঘাট গ্রামের দালাল বাচ্চু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ইতিমধ্যে তারা  দুই লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। তিনি সর্বস্ব বিক্রি করে এ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও সন্তানের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তিনি।

সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর থেকে এসব দালাল গা-ঢাকা দেয়। তাদেরও কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন থেকে দালাল চক্র কিছু সংখ্যক লোককে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া নিয়ে দ্বীপের মধ্যে রাখছে। অনেক লোক আমাকে এ কথা বলেছে। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব আমার ইউনিয়নের লোকগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্য।’  সেই সঙ্গে যারা মানব পাচারকারের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি দাবি করেন এ ইউপি চেয়ারম্যান। 

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘হবিগঞ্জে দুটি সীমান্তবর্তী উপজেলা রয়েছে- মাধবপুর ও চুনারুঘাট। এসব সীমান্ত দিয়েও মানব পাচার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমরা সেই তৎপড়তা বা সংবাদকে সামনে রেখে আমরা আমাদের গোয়েন্দা তৎপড়তা বৃদ্ধি করেছি। সাদা পোশাকে বিভিন্ন লোকজন আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। এ ছাড়া জেলার অন্য ইন্টেলিজেন্টস সংস্থা রয়েছে তারাও কাজ করছে। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া শুরু করেছি যে কারা কারা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত, আমরা তাদের নজরদারি করছি, তাদের গতিবিধি আমরা দেখছি, তারা আমাদের আয়ত্তে এলে আমরা তাদের গ্রেপ্তার 
করব।’ 
 
তবে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে মানবপাচার হচ্ছে এ ধরনেল কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তাঁরা পাননি বলে জানান মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। অভিযোগ পেলে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এ পুলিশ সুপার।