একটি ভালোবাসা বেঁচে যেতে পারে আপনার সহযোগিতায়
নাটকীয় কোনো গল্প নয়, ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ এটি। বেদনার চাদরে মোড়া একটি প্রচেষ্টা। এতদিন সেই ভালোবাসার সাক্ষী ছিলেন দুটি পরিবারের সদস্যরা। এই প্রতিবেদনে তার সাক্ষী হতে চলেছেন এনটিভি অনলাইনের সম্মানিত সব পাঠক।
এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো জান্নাত আক্তারের জীবনে ফিরে এসেছে ক্যানসার। ২০১৩ সাল থেকে ভুগছে সে। ২০২১-এ ফের ফিরে আসে তৃতীয়বারের মতো।
ওরাল কেমো এবং মূল কেমোথেরাপি দেওয়ার পরও ক্যানসার কোষ নির্মূল না হওয়ায় যে চিকিৎসা বাকি আছে তা হলো বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট, লাগবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। দুবারের ব্যয়বহুল ক্যানসার চিকিৎসার পর একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে তৃতীয়বারের এই বড় অঙ্কের টাকার ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব। তাই মানবিক দায়িত্বের জায়গা থেকে বিবেচনার অনুরোধ করেছে জান্নাতের পরিবার।
সকলের একটু সহানুভূতি একটা জীবনের বাঁচার ভরসা যোগাতে পারে। পুরোটা জেনে এমন একটি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে সুযোগ করে দিতে পারেন আপনি। দুজনকে একসঙ্গে থাকার প্রয়াসকে এগিয়ে নিতে পারেন দুহাত বাড়িয়ে।
বলছিলাম, কলমযোদ্ধা আরমান হাসান ও জান্নাত আক্তারে কথা। সালটি ছিল ২০১৮। আরমান তখন সবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিবিএর শিক্ষার্থী। স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়ার মন খারাপের মধ্যে ভার্সিটিতে যাওয়া-আসায় কখন যে কেটে যায় প্রথম সেমিস্টার, বলতে পারে না সে। বন্ধুত্বহীন সময় পার করে। ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয় সময়কে। দ্বিতীয় সেমিস্টারে কিছু সহপাঠির সঙ্গে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। তাদেরই একজন জান্নাত। কোনো এক অদৃশ্য টান টানত আরমানকে। দুজনের মধ্যে কথা হতো তাই একটু বেশিই। বাড়ে বন্ধুত্বের গাঢ়ত্ব।জান্নাতের প্রতি মুগ্ধতা বাড়ে আরমানের, জান্নাতও বোধ হয় বুঝে নেয়। তাই ২০১৯-এ ঈদুল ফিতরের পরদিন হুট করেই দেখা করার কথা বলে।
দেখা হয় দুজনের। পাশাপাশি হাঁটপথে আনন্দে দুলে ওঠে আরমানের মন। এরপর জান্নাতের কথায় ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তার হৃদয়। প্রথম দেখায় জানতে পারে—ভালোবাসার মানুষটি ২০১৩ সাল থেকে ভুগছে ক্যানসারে। বারবার মনে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে জান্নাতের কথা, ‘জানি, তুমি আমাকে পছন্দ করো। তাই চাই না কিছু লুকাতে।’
আরমানের মন খারাপের বারান্দায় জমতে শুরু করে মেঘ। বারবার সেখানে বৃষ্টি হয়ে ঝরে জান্নাত। বাসায় ফিরে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়—কাউকে যদি বিয়ে করে, তাহলে জান্নাতকেই করবে।
আরমান জানতে পারে, ২০১৩ সালে জান্নাতের শরীরে বাসা বাঁধে হজকিন লিম্ফোমা নামক ক্যানসার। অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। টিউমারে ফুলে যায় গলা। পরে ওই বছরই ছয় সার্কেল কেমোথেরাপি চলে। এরপর বছর তিনেক ভালো থাকার পর ২০১৬ তে আবারও ফিরে আসে ক্যানসার। ২০১৭-তে জান্নাতকে আবারও ছয় সার্কেল কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। দুবার এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসা করিয়ে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হয়ে পড়ে জান্নাতের পরিবার।
২০২১ সালে তৃতীয়বারের মতো ধরা পড়ে ক্যানসার। ২০২১ সালে মে মাসে তৃতীয় বারের মতো শুরু হয় জান্নাতের চিকিৎসা। এর আগেই জান্নাতের পাশে থাকতে তাকে বিয়ে করতে চায় আরমান।
পরের গল্প অনেক লম্বা। মেয়েটির বিষয়ে সব জানা আরমানের প্রস্তাবে বিষ্মিত হন জান্নাতের পরিবার। বোঝানোর চেষ্টা করে জান্নাতকেও। পরে জান্নাতকে মানানো, নিজের পরিবারকে বোঝানো; এরপর দুজন দুজনের হয়ে ওঠে তারা। ২০২১ সালের মে মাসের ২৮ তারিখে শুরু হয় তাদের দাম্পত্য জীবন। সহধর্মিনীকে সঙ্গ দিয়ে হাসিখুশি রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যান আরমান।
বিয়ের পরের মাসেই তৃতীয় বারের মতো চিকিৎসা শুরু হয় জান্নাতের। শুরুতে আর্থিক টানাপোড়নের কারণে ওরাল ক্যামো ও পরে মূল ক্যামোথেরাপি দেওয়া হয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সিরাজ খালেদা মেমোরিয়াল ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড জেনারেল হাসপাতালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. হক মাহফুজের তত্ত্বাবধায়নেই হয় সব।
গত বছর ডিসেম্বরে, অর্থাৎ এখন থেকে ছয় মাস আগে চিকিৎসক জানান, ফের ফিরে এসেছে ক্যানসার। এখন যে চিকিৎসাটি বাকি আছে, তা হলো বোরম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট। এর জন্য দরকার আনুমানিক খরচ ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
চোখ ছলছল আরমান বলেন, ‘আমার ভালোবাসাকে আমি বুকে ধরে রাখতে চাই। কিন্তু, এই অর্থ আমার বা আমাদের পরিবারের কারও কাছে নেই। মানুষ তো মানুষের জন্য। যদি স্বহৃদয়বানদের কেউ একটু একটু করে হলেও পাশে এসে দাঁড়ান, তাহলে মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমার ভালোবাসা বেঁচে ফিরতে পারে।’
জান্নাত আক্তার নিশির সহযোগিতায় হাত বাড়াতে যোগাযোগ করতে পারেন তার স্বামী আরমান হাসানের সঙ্গে (০১৭৭৬৪৩০২৫৪)। আর্থিক সহযোগিতার জন্য ০১৭৭৬৪৩০২৫৪ (বিকাশ পারসনাল ও নগদ)
এ ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর : আরমান হাসান, 0200015716811 (আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড, কাওরান বাজার শাখা, ঢাকা)। অথবা, জান্নাত আক্তার নিশি, 20507290200127016 (ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সেনপাড়া ব্রাঞ্চ, ঢাকা)।