চেয়ারম্যান বাবুর নির্দেশনায় সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা করে তার বাহিনী : র্যাব
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার সময় আশপাশে থেকে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু নেতৃত্ব দেন বলে জানিয়েছেন র্যাব। সংস্থাটি জানায়, বাবুর নির্দেশনায় রব্বানিকে হত্যা করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
আজ শনিবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই সব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সাংবাদিক হত্যায় জড়িত মাহমুদুল আলম বাবুসহ জড়িত চারজনকে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, মাহমুদুল আলম বাবু (৫০), তার সহযোগী মনিরুজ্জামান মনির (৩৫), জাকিরুল ইসলাম (৩১) ও রেজাউল করিম (২৬)।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য দেয়।
সাংবাদিকোকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘রাত আনুমানিক ১০টার দিকে সাংবাদিক নাদিম বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্জন স্থানে ওত পেতে থাকে। নাদিম তার এক সহকর্মীসহ মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পরবর্তীতে পিছন থেকে দৌঁড় দিয়ে বাবুর আরও কয়েকজন লোক গিয়ে গোলাম রব্বানি নাদিমকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। ওই সময় প্রধান অভিযুক্ত বাবু ঘটনাস্থলের নিকটে থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন। নাদিমের সহকর্মী তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে। একপর্যায়ে নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে বাবু ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তী দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক নাদিম মারা যান।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। সাংবাদিক নাদিম সাম্প্রতিক সময়ে বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকিসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ায় বাবু আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৪ জুন রাতে তাকে মারধর করে গুরুতর জখম করা হয়।‘
র্যাব জানায়, মাহমুদুল আলম বাবু ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির গ্রেপ্তার এড়াতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়ীতে আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার রেজাউল, মনির এবং জাকির মাহমুদুল হাসান বাবুর সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সহযোগী। গ্রেপ্তার রেজাউল দৌঁড়ে গিয়ে নিহত নাদিমকে ধাক্কা দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেন। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলেই বাবুর নির্দেশে তারা নাদিমকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।’