বর্ষার বাহন কোষা বেচা-কেনায় সরগরম ভৈরব

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গ্রামীণ হাট-বাজারগুলোতে গ্রামাঞ্চলের বর্ষার বাহন কোষা তৈরি ও বেচা-কেনায় সরগরম। ছবি : এনটিভি

গ্রামাঞ্চলের বর্ষার বাহন কোষা (ছোট নৌকা) তৈরি আর বেচা-কেনায় সরগরম হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ হাট-বাজারগুলো। ষড়ঋতুর মধ্যে অন্যতম বর্ষাকালে হাওর বা নিম্নাঞ্চলের মানুষদের একমাত্র বাহন এই কোষা।

ইতোমধ্যে বর্ষাকাল শুরু হয়ে যাওয়ায় ভৈরবের বিভিন্ন এলাকায় এই কোষা তৈরির ধুম পড়েছে। কারিগর, ব্যবসায়ী আর ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে নৌকা তৈরির এলাকাগুলো। তৈরি করা এসব নৌকা স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, কটিয়াদী, রায়পুরা, বেলাবো, আশুগঞ্জ, সরাইল উপজেলায় বিক্রি করা হচ্ছে।

নৌকা তৈরিকে কেন্দ্র করে ওইসব স্থানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু মৌসুমি স-মিল। তাই ব্যস্ততা ওইসব স-মিলগুলোতেও। ফলে এসব কাজে অনেক মৌসুমি শ্রমিকের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, ভৈরব শহরের কিছু অংশ বাদ দিলে পুরো এলাকাটিই মূলত গ্রামাঞ্চল। হাওর ও ভাটি এলাকার প্রবেশমুখ হিসেবে পরিচিত মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র-কালী নদীসহ অসংখ্য খাল-বিল নালায় বিধৌত ভৈরবের পল্লীর বাসিন্দাদের বর্ষায় নৌকা ছাড়া আর কোনো বাহন থাকে না। তখন তাদের অতি প্রয়োজনীয় বাহন বিভিন্ন কোষা বা ডিঙি নৌকা।

পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এলাকার পথ-ঘাট যখন তলিয়ে যায়, তখন নৌকা ছাড়া তাদের যাতায়াতের আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা থাকে না। এমন কি এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেতে হলেও নৌকা ছাড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ লোকের অন্যকোনো কাজ না থাকায় নদী-নালাসহ প্লাবণ ভূমি থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। মাছ শিকারেও এসব নৌকার প্রয়োজন হয়। ফলে এ সময় নৌকার চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ।

অতিপ্রয়োজনীয় এই বাহনটির চাহিদা মেটানোর কাজে নিয়োজিতদের এখন যেন এত দম ফেলার ফুরসৎও নেই। দিন-রাত চলছে এই বাহন তৈরির কাজ।

কোষা তৈরির কারিগর কুদ্দুস মিয়া, সবুজ মিয়া আর চুন্নু মিয়া জানান, সারা বছর তাঁরা এক রকম বেকারই থাকেন। কিন্তু চৈত্র থেকে শ্রাবণ-এই পাঁচ মাস তাঁরা কোষা তৈরির কাছে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিনিটি নৌকা তৈরিতে তারা মুজুরি পান আকার ভেদে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। প্রতিদিন এক থেকে দেড়টা নৌকা তাঁরা তৈরি করতে পারেন।

প্রতি মৌসুমে সাধারণত ৫০ থেকে ৬০টি নৌকা তৈরি করে থাকেন তাঁরা। তবে যে বছর পানি বেশি হয় এবং বেশি দিন স্থানীয় হয়, সে বছর এক থেকে দেড়শ কোষা তৈরি করে থাকেন তাঁরা।

নৌকার কারিগর রইছ মিয়া ও রায়হান ভূঁইয়া জানান, তারা ক্রেতার চাহিতা অনুযায়ী সাড়ে তিন থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে কোষাগুলো তৈরি করে থাকেন। তাঁদের তৈরি এসব নৌকা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। গুণগত মান ভালো এবং দামেও সাশ্রয়ী হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের কাছে এখানকার নৌকার বেশ কদর বলে জানান তাঁরা।

আগানগরের লুন্দিয়ার মজিদ শেখ, শ্যামপুরের হরিচন্দ্র দাস, সাদেকপুরের মেন্দিপুরের নজরুল ভুইয়া জানান, এখানকার তৈরি কোষা দামে কম এবং টেকসই। তাই তাঁরা এখানকার তৈরি কোষার উপর ভরসা করেন বহু বছর ধরে।

শিমুলকান্দি বাজারের গাউছিয়া স-মিলের মালিক মো. ওমর ফারুক জানান, তিনি নৌকা তৈরির কাঠ চেড়ার পাশাপাশি নিজেও কারিগর দিয়ে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করে থাকেন। মৌসুমি ব্যবসায়ী হিসেবে কাঠ চেড়া ও নৌকা তৈরি করে বিক্রি থেকে তিনি বেশ ভালো একটা টাকা মুনাফা করে থাকেন।