ইইউ পর্যবেক্ষকদের মনোযোগে নির্বাচনকালীন মানবাধিকার

Looks like you've blocked notifications!

নির্বাচনের সময় বাংলাদেশে মানবাবিধার লঙ্ঘন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটবে কি না তা মানবাধিকার কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-র প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল।

প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটি গত শনিবার (৮ জুলাই) ঢাকায় আসে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে ঢাকায় কাজ করছে তারা।

ছয় সদস্যের এই দলটি সোমবার (১০ জুলাই) সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তারা সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আসাদ আলম সিয়ামসহ অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইইউর প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেলেরি রিকার্ডো।

বৈঠকের পরে তারা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সংবাদমাধ্যমকে কোনো ব্রিফ করা হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর তারা মানবাধিকার কমিশনে যান। সেখানে তারা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ কমিশন সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখান থেকে যান সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “তারা সার্বিক নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমাদের কাছে জানতে চান। তবে বিশেষ করে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তারা আলাদাভাবে জানতে চান। জানতে চান, নির্বাচনে সহিংসতা হবে কিনা, মানবাধিবার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটবে কিনা। এখানে এর আগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটেছে তারা সেগুলোর উল্লেখ করেন এবং সে ব্যাপারে আমরা কী ব্যবস্থা নিয়েছি তা-ও জানতে চেয়েছেন। আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছি তা তাদের জানিয়েছি। কয়েকদিন আগেও নির্বাচনের সময় এক প্রার্থীকে মারধর করা হয়েছে। আমরা একটি মামলা করেছি। নির্বাচনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা কী করব তার পরিকল্পনা তাদের জানিয়েছি।”

ড. কামাল উদ্দিন আরও জানান, “তারা এসেছেন মূলত অ্যাসেসমেন্ট করার জন্য, যার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচনে তাদের পর্যবেক্ষক টিম আসবে কি না। আমাদের কাছ থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন।”

ড. কামাল উদ্দিন আরও বলেন, “ভোটাধিকার হলো একটি অন্যতম মানবাধিকার। আমরা বলেছি নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই কথা বলছেন। এটা বলারই কথা। তবে আমাদের দিক থেকে মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন, তাদের মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘন না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছি।”

শনিবার ইউইউর প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় আসার আগে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি উইংয়ের মহাপরিচালক মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “এই মিশনের কাজ হবে মূলত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, মিশনের পরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করা।”

ঢাকায় আসার পর এরইমধ্যে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন।

বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ইইউ যখন কোনো দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠায় সেই দলের সদস্য সংখ্যা ১০০ জনের বেশি হয়। তাদের যাবতীয় খরচ এবং নিরাপত্তা ইইউর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যবেক্ষণ কোনো কাজে আসবে কি না সেটা তারা বিবেচনা করে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। এই দলটি বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন দেবে। ওই প্রতিবেদনেই বলা হবে পর্যবেক্ষক পাঠানোর মতো সার্বিক পরিস্থিতি আছে কি না।

তারা সরকার, নির্বাচন কমিশন, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, এদেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন।

মানবাধিকার কর্মীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা কথা বলবেন ১৬ জুলাই। এরই মধ্যে তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। যারা চিঠি পেয়েছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার কর্মী নূর খান। তিনি বলেন, “তারা আসলে এই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করে নির্বাচনের পরিবেশ, সবার অংশগ্রহণ হবে কি না, নিরাপত্তা, মানবাধিকার, আইন-কানুনে কোনো ত্রুটি আছে কিনা- এসব পর্যবেক্ষণ করেই তারা পর্যবেক্ষণ টিম পাঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, এই কাজে তাদের অনেক বড় বিনিয়োগ করতে হয়।”

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ‘ব্রতীর’ প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ এর আগে ২০০৮ সালে ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।  এবারও প্রাক পর্যবেক্ষণ টিমের সঙ্গে তার কথা হবে। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “তারা আসলে বুঝতে চায় বাংলাদেশে আদৌ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার দরকার আছে কি না।  ওরা কিন্তু এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি যে, অবজারভার পাঠাবে। ওরা আসলে তাদের পর্যবেক্ষণ কোনো কাজে আসবে কি না তা আগে জানতে চায়।”

“২০১৪ ও ২০১৮ সালে তারা অবজার্ভার পাঠানো অর্থপূর্ণ মনে করেনি। তাই পাঠায়নি। কিন্তু তারা ২০০৮ সালে পাঠিয়েছে। পাঠানোর আগে তারা পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। আমাদের সঙ্গে বার বার কথা বলেছে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছে। তারা নিশ্চিত হতে চায় যে, সবার অংশগ্রহণে স্বাভাবিক পরিবেশে একটি নির্বাচন হবে কিনা। সেটা হলেই তারা পর্যবেক্ষক পাঠায়,” বলেন শারমিন মুরশিদ।

শারমিন মুরশিদ আরও বলেন, “আলোচনার সময় আমাদের দিক থেকে নির্বাচন নিয়ে আমরা কি দেখতে চাই তা বলি। রাজনৈতিক দল বা অন্যরাও তাই করেন। আর ওরা ওদের দিক থেকে দেখে সেই ক্ষেত্রে তাদের সহায়তার কোনো সুযোগ আছে কিনা। ওদের রোল প্লে করার কিছু না থাকলে ওরা পর্যবেক্ষক পাঠায় না।”

প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেলের কাছে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেবে। ২৩ জুলাই পর্যন্ত তাদের ঢাকায় অবস্থানের কথা রয়েছে।