ফুলপরী বললেন, ‘আমার মনে হয় ইবিতে আর পড়া হলো না’
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীসহ পাঁচ অভিযুক্তকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনার দীর্ঘ ছয় মাস পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী। একইসঙ্গে ইবিতে আর পড়া হলো না বলেও হতাশা প্রকাশ করেছেন এই শিক্ষার্থী।
নির্যাতনের ঘটনার পর থেকেই জড়িতদের আজীবনের জন্য বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে আসা ফুলপরী বলেন, ‘আমার মনে হয়, ইবিতে আর পড়া হবে না। আমি নিশ্চিত, বহিষ্কৃতরা এক বছর পর ফিরে এসে আবার আমার সঙ্গে খারাপ কিছু করবে। আমাকে বাধ্য হয়ে, এখান থেকে চলে যেতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থেকে নির্যাতনে জড়িতদের এমন শাস্তির বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ফুলপরী বলেন, ‘আমার সঙ্গে তারা যে অন্যায়টা করেছে, তার শাস্তি এত কম হতে পারে না। খুবই কম শাস্তি হয়েছে। আমার তো দাবি ছিল, তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা।’
শঙ্কার কথা জানিয়ে ইবির এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘তারা যে এক বছর পর ফিরে আসবে এবং আমার ক্ষতি করবে, এটা স্বাভাবিক। যে কোনো মুহূর্তে, যে কোনো সময় করবে। এখানকার প্রশাসন কিছুই করতে পারবে না।’
নিজের ওপর হওয়া নির্যাতন নিয়ে ফুলপরী বলেন, ‘অভিযুক্তরা স্বীকারও করে না আমাকে তারা মারধর করেছে। খারাপ কিছু করেছে। আমার ওপর দোষ চাপিয়ে বিভিন্ন সময় মিথ্যে কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখে। এতে আমি খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকি। আমি চাই, আমার সঙ্গে যা হয়েছে তার যেন ন্যায়বিচার পাই।’
এর আগে আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ইবির পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কার্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এবং হাইকোর্টের যে প্রতিবেদন আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল তার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট’ এর অনুসারে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীর এক বছরের জন্য ছাত্রত্ব বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এটা সর্বোচ্চ শাস্তি। এ সময়ে বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস–পরীক্ষাসহ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না।’
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা (সেশন : ২০১৭-১৮), চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি (সেশন : ২০২০-২১), আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম (সেশন : ২০২০-২১), ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম (সেশন : ২০২০-২১) ও একই বিভাগের একই সেশনের মুয়াবিয়া জাহান। এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরী নামের এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগনেত্রী ও পরিসংখ্যান বিভাগের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মির বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, উচ্চ আদালত এবং ছাত্রলীগের পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের আলোকে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই পাঁচ অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ তাদের তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করে।