নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

Looks like you've blocked notifications!
গাজীপুর সদরের নুহাশপল্লীতে প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। ছবি : এনটিভি

গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে নুহাশপল্লীতে নন্দিত কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের একাদশতম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। তাঁর পরিবার আজ বুধবার (১৯ জুলাই) নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করে।

এ সময় হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অনুমতি ছাড়া তাঁর নাটক ও সিনেমা প্রদর্শন বন্ধের দাবি জানান। 

কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর দুই ছেলে নিশাত ও নিনিতকে নিয়ে মেহের আফরোজ শাওন গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে নূহাশপল্লীতে আসেন।

এদিকে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল থেকেই তাঁর ভক্ত এবং হিমু পরিবহণের সদস্যরা নূহাশ পল্লীতে ভিড় জমায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা নূহাশপল্লীর লিচুতলায় সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে কবর জিয়ারত করে। এ সময় তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এ সময় সদর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন এবং নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণ্যমান্য ব্যক্তিরাসহ তাঁর শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।

কবর জিয়ারত শেষে মেহের আফরোজ শাওন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার দুই ছোট সন্তান অকালে তাদের পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই ব্যাপারটি আমাকে ভীষণ কষ্টতাড়িত করে।’ এ সময় তিনি হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।

মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ চলে গেছেন ১১ বছর। এখনও তাঁর নাটক যদি ইউটিউব বা চ্যানেলে চলে আমরা শেষ না করে উঠতে পারি না। তিনি কত বড় মাপের লেখক, পরিচালক, গীতিকার ও সৃষ্টিশীল সত্ত্বা ছিলেন, তাঁর অনুপস্থিতে এখন তা অনুধাবন করা যায়। তবে খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য তাঁর বহু নাটক, ধারাবাহিক নাটক, এক পর্বের নাটক ও সিনেমা বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউব চ্যানেলে কোনো রকম চুক্তিপত্র ছাড়াই অনৈতিকভাবে প্রদর্শন করা হচ্ছে। তিনি বেঁচে থাকতেও এসবের জন্য তারা তাঁর অনুমতি নেয়নি, মৃত্যুর পরও তাঁর উত্তরাধিকার কারোর সঙ্গে চুক্তি বা মৌখিক অনুমতিও নেয়নি। দেশের প্রথম সারিরসহ ওটিটি চ্যানেলগুলোতে তাঁর নাটকগুলো চালানো হচ্ছে কোনো ধরনের চুক্তি বা যোগাযোগ ছাড়া। আমি এসব চ্যানেলের নাম বলতে চাই না। কারণ তাঁরা লজ্জা পাবেন। এটা হতে পারে না। এ ব্যাপারে আমি অভিযোগ করেছি, কিন্তু অভিযোগের কোনো জবাব এখনও পাইনি। আমি আইনগতভাবে অভিযোগ করিনি, তবে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলাম। দেশের প্রথম সারির ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাদের একজনকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি এবং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এখন পর্যন্ত ওনাদের দিক থেকে কোনো মুভমেন্ট বা নড়াচড়া আমি দেখতে পাইনি।’

নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ স্যারের একাদশতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নূহাশপল্লীতে সকাল থেকে কোরআনখানির আয়োজন করা হয়। স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বিভিন্ন মাদ্রাসার আড়াই শতাধিক এতিম ছাত্রদের নিয়ে এ কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়ার অনুষ্ঠান হয়। পরে এতিমদের হুমায়ূন আহমেদের পছন্দের খাবার তুলে দেন শাওন ও তার দুই ছেলে। দুপুরে সাদা ভাত, গরু ও মুরগির মাংস, সবজি, ডাল এবং মিষ্টি খেতে দেওয়া হয়।’

মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ উপস্থিত হুমায়ূন ভক্তদের মধ্যেও খাবার বিতরণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সন্ধ্যা পর্যন্ত নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন ভক্তদের আগমন অব্যাহত ছিল।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। তাঁর ডাক নাম কাজল। তাঁর বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা গৃহিণী। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তাঁর ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। ২০১১ সালে হুমায়ূন আহমেদের ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরের বছরের মাঝামাঝি সময় অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ইনফেকশন হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমেরিকায় নিউইর্য়কের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ নিজের প্রতিষ্ঠিত নুহাশপল্লীর লিচুতলায় দাফন করা হয়।

জনপ্রিয় এই ঔপন্যাসিকের বিচরণ ছিল নাটক-চলচ্চিত্রেও। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে হত্যার জন্য গুলি ছুড়লেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। তাঁকে তাঁর প্রথম ধারাবাহিক টিভি নাটক ‘এই সব দিনরাত্রি’ বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা, জননীর গল্প প্রভৃতি।