বিএনপির পদযাত্রায় গিয়ে মৃত্যু

বিদেশ যাওয়া হলো না সজীবের

Looks like you've blocked notifications!
লক্ষ্মীপুরের কৃষকদল নেতা সজীব হোসেন। ছবি : এনটিভি

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতের পর প্রচুর রক্তক্ষরণে কৃষকদল কর্মী সজীব হোসেন (১৯) নিহত হয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। তার শোকে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে মা নাজমা বেগমের। তার বাবা আবু তাহের এখনও ছেলে হারানোর শোক সামলে উঠতে পারেননি।

সজীব লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের ধন্যপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষকদলের সদস্য ছিলেন।

সজীবের দাদা মো. হানিফ মিয়া চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের  আট নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমার নাতি সজীব কৃষকদলের সক্রিয় সদস্য ছিল। ১৮ জুলাই আমার সঙ্গেই সে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে গিয়েছে। কিন্তু সেখানে ছাত্রলীগের হামলার পর তাকে আর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মিছিল শেষে জানতে পারি একটি বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।’

সজীবের বাবা আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বড় ছেলে মিজান সৌদি আরব রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই সজীবের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। ১৮ জুলাই সে বিএনপির প্রোগ্রামের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। সে আমাকে বলে গেছে, ‘বাবা আমি লক্ষ্মীপুর থেকে একটু আসি’। কিন্তু সে আর জীবিত ফিরে আসেনি। তার লাশ বাড়িতে এসেছে। সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার ছেলের সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতা ছিল না। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় আমাদের পদযাত্রা কর্মসূচিতে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। তখন আমাদের কৃষকদল কর্মী সজীবকে মদিন উল্যা হাউজিংয়ের সামনে নিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে সজীব আহত অবস্থায় একটি বাসার সিঁড়ি ঘরে গিয়ে লুটিয়ে পড়ে। সেখানেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এখন পুলিশ বলছে এটি অরাজনৈতিক ঘটনা। পুলিশ তড়িঘড়ি করে সজীবের ভাই সুজনকে এনে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। আমরা সজীব হত্যায় আদালতে মামলা দায়ের করব।’

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, এমপি বলেন, ‘সজীব হত্যায় বিএনপির নেতাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। সজীব যদি তাদের কর্মী হয়ে থাকে, তাহলে গভীর রাতে কেন তারা এর সন্ধান দিলেন। আমরা সজীবসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। এ হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। এতে রাজনৈতিক কোনো বিষয়ও নেই। পুলিশ সুপারও প্রেস ব্রিফিং করে বলেছেন সজীব বিএনপির প্রোগ্রামে আসেনি। লাশকে পুঁজি করে লক্ষ্মীপুরে রাজনৈতিক কুটকৌশল না করতে বিএনপিকে অনুরোধ করছি।’

বিষয়টি নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, ‘জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে সজীবের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয় সিসিটিভি ফুটেজ। ওই ফুটেজে দেখা গেছে, সজীব আহত অবস্থায় ফিরোজা ভবন নামে একটি বাসায় ঢুকে পড়ছেন। মৃত্যুর আগে ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া নোমানের সঙ্গে তার কথা হয়। সজীব ওই ব্যক্তিকে বলেছেন, সে বিএনপির প্রোগ্রামে আসেনি কিংবা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না। চার থেকে পাঁচজন লোক তাকে কুপিয়েছে। তার কাছে লোকগুলো টাকা পায়। টাকাপয়সার লেনদেন ও বিয়ে সংক্রান্ত একটা ব্যাপার আছে। এরপর সজীব আর কোনো কথা বলতে পারেননি।’

পুলিশ সুপার আরও জানান, পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি। সজীবের শরীরে চারটি কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে সজীবের রক্তাক্ত দেহ।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি চলার সময় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে লক্ষ্মীপুরে কৃষকদল নেতা সজীব হোসেন নিহত হন।