সুঁই বের করতে গিয়ে চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

Looks like you've blocked notifications!
বরিশালে অস্ত্রোপচারের সময় মারা যাওয়া শিশু তানজিম। ছবি : এনটিভি

বরিশালের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছয় মাস বয়সী শিশুর নিতম্বে ঢুকে পড়া সুঁই বের করতে অস্ত্রোপচার করার সময় চিকিৎসকের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিকেলে নগরীর বান্দ রোডের রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া শিশু তানজিম পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাউকা গ্রামের ফিরোজ খানের ছেলে।

শিশুর মামা রাকিব জানান, তানজিমের নিতম্বে ছোট একটি সুঁই ঢুকে যায়। গলাচিপায় এক্স-রে করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পটুয়াখালীতে আসেন তারা। সেখানের চিকিৎসক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের কাছে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। গলাচিপা থেকে গত সোমবার (৩১ জুলাই) তারা প্রথমে বরিশাল শেবাচিমে আসেন। সেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ায় চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের পরামর্শে তারা নগরীর আগরপুর রোডের মিড টাউন হাসপাতালে শিশু তানজিমকে ভর্তি করেন। পরে আবারও ডা. তৌহিদুল ইসলাম তাদের জানাযন, মিডটাউনে অস্ত্রোপচারের ভালো ব্যবস্থা নেই। রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। তার পরামর্শে গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে তানজিমকে ভর্তি করানো হয়।

রাকিব বলেন, ‘অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার আগেও ভাগ্নে খেলা করেছিল। অস্ত্রোপাচারের সময় আমি ভেতরে ছিলাম। অস্ত্রোপচারের জন্য তানজিমের শরীরে সাত থেকে আটবার সুঁই ফুটানো হয়। পরে কোমরে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।’

শিশুর মামা রাকিব আরও বলেন, ‘ডা. তৌহিদুল ইসলাম মেশিনের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করার কথা বলে হাতে করেছেন। অজ্ঞান শিশুকে কোনো অক্সিজেন দেননি। কাটা স্থান সেলাই করেননি। তাদের বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু, তারা কয়েকজন ওটি রুমে হাসি-ঠাট্টায় ব্যস্ত ছিলেন। পরে নিচ থেকে আমার পরিচিত ফার্মেসির একজনকে নিয়ে ফিরে এলে আর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কিছু পরেই আমি ভেতরে বোনের চিৎকার শুনতে পাই। ওরা আমার ভাগ্নেকে মেরে ফেলেছে।’

শিশু তানজিমের বাবা ফিরোজ খান বলেন, ‘ডা. তৌহিদুল ইসলাম নিজে বলেছেন, শিশুটির নিতম্বে একটি সুঁই ঢুকেছে। এটা মেশিনে অপারেশন হবে। এটা কোনো বিষয়ই নয়। ২০ হাজার টাকাও জমা দিয়েছি।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশুর অস্ত্রোপচার করেছেন ডা. তৌহিদুল ইসলাম। তাকে অজ্ঞান করেছে ডা. মনিরুল ইসলাম।

শিশুকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত, হৃদয়বিদারক। ছয় মাস বয়সী একটি শিশুকে অজ্ঞান করা ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুটির জরুরি অস্ত্রোপচারও প্রয়োজন। তাই ঝুঁকি নিতে হয়েছে। এজন্য আমার ১৬ বছরের চিকিৎসা পেশায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু, অস্ত্রোপচারের শেষ মুহূর্তে এসে শিশুর হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। এখানে আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না।’

চিকিৎসক ডা. তৌহিদুল ইসলাম ব‌লেন, ‘অস্ত্রোপচার সফল হ‌য়ে‌ছিল, কিন্তু অ‌্যা‌নেস‌থে‌সিয়ায় সমস্যা থাকায় এ ঘটনা ঘটে।’

ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুল ক‌রিম বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে এখানে এসেছি। মৃত শিশু তানজিমের অস্ত্রপচার হয়েছিল। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে।’