সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আইনজীবীর আবেদন

Looks like you've blocked notifications!

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থা গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান। আজ সোমবার (১৪ আগস্ট) ডাকযোগে রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদনপত্রটি পাঠানো হয়। সংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে, রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

আবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন সময়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ, সংঘর্ষ, রাস্তাঘাট অবরোধের কারণে দেশের সাধারণ জনগণ চরমভাবে ক্লান্ত এবং বিরক্ত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, দেশের তরুণ সমাজ সরকার ও বিরোধীদলগুলোর কর্মকাণ্ডে চরমভাবে হতাশ। এজন্য দেশের মেধাবী তরুণ সমাজ প্রতিনিয়ত দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে ও যাওয়ার চেষ্টা করছে।

আইনজীবী আবেদনে আরও বলেন, বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো যেখানে উন্নত রাষ্ট্র হ‌ওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে বাংলাদেশ এখনো নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে প্রত্যেক নির্বাচনের আগে সরকার ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষ ঘটছে। ফলে, দেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে এবং দেশের জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো স্বীকৃত ব্যবস্থা নয় উল্লেখ করে আবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের দুই একটি দেশ ছাড়া কোথাও এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। মূলত, এই রাজনৈতিক সমাজ ব্যবস্থায় শিশু ও পাগল ব্যতীত কেউ নিরপেক্ষ নয়। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা আদৌ সম্ভব নয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।

এ অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আলোচনা ও সমালোচনা পরিত্যাগ করে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনের জন্য সর্বদলীয় সরকার গঠন করলে একদিকে যেমন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো সংশয় থাকবে না, অপরদিকে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো সরকার পরিচালনায় কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।

সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা আবেদনে তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের কোনো সংশোধন বা পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না। এই সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থায় বিদ্যমান সংসদ বহাল থাকবে। তবে, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সব সদস্য পদত্যাগ করবেন। এ অবস্থায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন, যিনি বিগত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সদস্য ছিল না। নতুন প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন।

নতুন মন্ত্রিসভার ৯০ শতাংশ (নব্ব‌ই শতাংশ) সদস্য বিদ্যমান সংসদ সদস্য হবেন। তবে, তারা এমন ব্যক্তি হবেন যারা বিগত দশ বছরের মধ্যে কোনো মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রধানমন্ত্রী বাকি ১০ শতাংশ (দশ শতাংশ) টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। এক্ষেত্রে নতুন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ জানাবেন তাদের দলের কোনো যোগ্য এক বা একাধিক সদস্যকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার প্রস্তাব দিতে।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত সদস্যদের নিয়ে এমনভাবে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন যাতে প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত  অন্তত একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী থাকে। তবে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীরাও এমন ব্যক্তি হবেন, যারা বিগত দশ বছরের মধ্যে কোনো মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। তবে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী প্রস্তাব না করলে সেক্ষেত্রে নতুন প্রধানমন্ত্রী অন্য রাজনৈতিক দল থেকে প্রস্তাবিত একাধিক মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবেন। এভাবে একটি নতুন প্রধানমন্ত্রী ও নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে।

সর্বদলীয় সরকারে যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন বা মারা যান সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পুনরায় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যের মধ্যে কাউকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন, যিনি বিগত দশ বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। এ ছাড়া মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও আগের প্রস্তাব অনুসরণ করতে হবে।

দেশের জাতীয় স্বার্থে রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থা বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে আবেদনে।