এক শিকলে বাঁধা অন্ধ মা-প্রতিবন্ধী ছেলের জীবন

Looks like you've blocked notifications!
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় ঘুমিয়ে আছেন এক শিকলে বাঁধা অন্ধ মা রহিমা খাতুন ও প্রতিবন্ধী ছেলে আব্দুর রহমান। ছবি : এনটিভি

হোক তিনি অন্ধ কিংবা বোবা। মায়ের ভালোবাসার তুলনা নেই। সন্তানের জন্য সব কিছু করতে পারেন তিনি। বিলিয়ে দিতে পারেন নিজের মূল্যবান জীবন। মায়েরা হন সব কিছুর ঊর্ধ্বে।

গায়ের গন্ধ শুঁকে চিনতে পারেন নিজের সন্তানকে। সর্বক্ষণ শরীরের সঙ্গে লেপ্টে রাখেন তাকে। নিজের সুখ-আহ্লাদ ভুলে যান তার জন্য।  কখনও কখনও হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে শিকল দিয়ে তাকে নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এমন নজির মিলেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ।

মমতাময়ী এ অন্ধ মায়ের নাম রহিমা খাতুন। শরীরে হাজারও ক্ষত চিহ্ন। প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে যাযাবর জীবন কাটছে তাঁর। যেখানেই রাত-সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন মা রহিমা ও ছেলে আব্দুর রহমান (৮)। ভিক্ষা করে চলে তাঁদের সংসার।

আব্দুর রহমান মানসিক প্রতিবন্ধী। ছেলেকে হারানোর ভয়ে রহিমা খাতুন শিকল দিয়ে সব সময় বেঁধে রাখেন তাকে। রাতে ঘুমানোর সময়ও শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। শিকল বন্দি মা ছেলের দেখা মেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের বারান্দায়। তাদের দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন।

রহিমা খাতুনের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের জয়নাল হোসেনের মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল তার। খোঁজখবর নেন না স্বামী। তাই প্রতিবন্ধী শিশু সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান তিনি। সম্বল তাঁর একটি প্লাস্টিকের বালতি আর পাটের বস্তায় ভরা কাপড়। একমাত্র ভরসা ছেলে আব্দুর রহমান। সে ই রহিমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। কারো যেন কুনজর না পড়ে তার জন্য ছেলের গলাতে ঝুলিয়েছেন কয়েকটি তাবিজও।

গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে রহিমা খাতুন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন চিকিৎসা নিতে। রাতে ঘুমিয়ে পড়েন হাসপাতালের মেঝেতেই। ছেলেকে নিজের শরীরের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। খাবার জুটেনি। তাই খিদে নিয়েই ঘুমিয়ে ছিলেন মা-ছেলে। পরে গতকাল বুধবার দুপুরে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান তিনি। সঠিক গন্তব্য নেই তাঁর। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন ইদ্রিস আলী জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে আসেন তাঁরা। রাতে হাসপাতালের মেঝেতে  ছেলেকে নিজের শরীরের সঙ্গে শিকলে বেঁধে শুয়ে ছিলেন। ওষুধ নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি।

এক শিকলে বাঁধা অন্ধ মা রহিমা খাতুন ও প্রতিবন্ধী ছেলে আব্দুর রহমান। ছবি : এনটিভি

কথা হয় রহিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান স্বামী কোনো খোঁজখবর নেন না তাদের। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষা করেন। ঘরবাড়ি নেই, রাস্তায় থাকেন। দুই চোখ অন্ধ। দেখতে পান না। বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত। এসেছিলেন হাসপাতালে, ওষুধ নিতে। ছেলের সহায়তায় চলাফেরা করতে হয় তাঁকে। বুধবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এ সময় সরকারের কাছে একটি ঘর দাবি করেন তিনি। 

একজন প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সাংবাদিক জানান, একটি রিকশায় করে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে তারা। একজন অপরজনের আড়াল হন না কখনও। এই শিকল আলাদা হতে দেয় না তাঁদের।

আজ বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) মা-ছেলের আর খোঁজ মেলেনি। যেখানেই তাঁরা যান না কেন, এক শিকলে বাঁধা আছে তাঁদের জীবন।