পি কের রাজ্যের পতন যেভাবে
প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের চাকরিজীবনে উত্থান ছিল খুব দ্রুত। ২০০৮ সাল পর্যন্ত আইআইডিএফসিতে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন তিনি। এরপরের বছর হঠাৎই হয়ে ওঠেন অর্থনৈতিক খাতে বড়কর্তাদের একজন। মাত্র ১০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিয়ে হয়ে যান রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি। এরপর ২০১৫ সালে বনে যান এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি। গড়ে তোলেন নিজের রাজ্য। দুদকের মামলার আগে-পরে সেসবের পেছনের সব কাণ্ড বেরিয়ে আসতে শুরু করে একে একে। আজ রোববার (৮ অক্টোবর) আদালত বলেছেন, পি কে হালদারের মতো অর্থ পাচারকারীদের কোনো আদর্শ নেই।
মামলা ও বিভিন্ন ঘেটে দেখা যায়, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দখলে পি কে হালদার ছিলেন সক্রিয় ভূমিকায়। পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছয় হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এ সম্পদের বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। বর্তমানে এর বাজারমূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিজের নামে জমি কিনেছেন চার হাজার ১৭৪ শতাংশ। এর দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ, এ সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য ২২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পি কে হালদারের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানি হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন নির্মাণ করেছেন, যেটির মূল্য ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। নিজের কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে দুই একর জমির ওপর নির্মাণ করেন আট তলা হোটেল, যার আর্থিক মূল্য এখন ২৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পি কে হালদারের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী ও অনঙ্গমোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি। এর বর্তমানে দাম রয়েছে ১৬৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে এক কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন পি কে হালদার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮০ কোটি টাকারও বেশি।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদকের উপপরিচালক সালাউদ্দিন। সেই মামলার তদন্তে নেমে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের তথ্য পায় মামলার তদন্ত সংস্থা। তবে, মামলা হওয়ার আগেই পি কে হালদার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তদন্ত করে পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এরপর আজ পি কের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। ওই রায়ে তাকে ২২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।