ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনা

বাড়ি ফেরা হলো না যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জালালের, হাসপাতালে একাকী শিশু রবিউল

Looks like you've blocked notifications!
বাম থেকে জালাল আহমেদ, আফজাল হোসেন ও শিশু রবিউল। ছবি : এনটিভি

দুর্গাপূজার ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে অফিস শেষে বাড়ির পথ ধরেছিলেন ভৈরব উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের ক্যাশিয়ার জালাল আহমেদ (৩০)। ঢাকার দক্ষিণখানের বাসায় যাওয়ার জন্য এগারো সিন্ধুর ট্রেনে যাত্রা করেছিলেন তিনি। কিন্তু, পথে ভৈরব রেল জংশনে রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। আর হলো না তার বাড়ি ফেরা। এ ছাড়া ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশু রবিউলের প্রহর কাটছে স্বজনদের অপেক্ষায়।  

ভৈরব উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ে জালাল আহমেদের সহকর্মীরা বলেন, ‘অফিস শেষ করে ঢাকার বাসার উদ্দেশে এগারো সিন্ধুর ট্রেনে যাচ্ছিলেন জালাল। দুর্গাপূজার ছুটি একদিন। সেই ছুটি পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য তিনি যাচ্ছিলেন। তার আর পরিবারের সদস্যদের কাছে ফেরা হলো না।’

আকস্মিকভাবে প্রিয়জনকে হারানোর শোকে ভেঙে পড়েছেন জালালের স্ত্রী নীরা বেগম। তিনি বলেন, ‘সোমবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ট্রেনে উঠার আগে ফোনে জানান, ট্রেনে করে ঢাকায় আসছেন। কিন্তু, ঢাকায় আর তার ফেরা হলো না। এর কিছুক্ষণ পরই যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে আর পাইনি। তারপর শুনলাম, ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে, অনেক যাত্রী মারা গেছে। তারপরেই দ্রুত ঢাকা থেকে ছুটে এসে তার মরদেহ পাই।’

ভৈরবের ট্রেন দুর্ঘটনার প্রায় একদিন কেটে গেলেও এখনও ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতা ভিড় করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ যেন স্বজনদের শোকে স্তব্ধ। ইতোমধ্যে স্বজনদের কাছে ১৬ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। আহত আরও ৭৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ বাজিতপুর ও কিশোরগঞ্জের দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন তিনজন। এই তিনজনের মধ্যে ১২ বছরের এক শিশু রয়েছে। সে তার নাম রবিউল বলে জানিয়েছে, কিন্তু নিজের ঠিকানা সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি।

শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সরা জানান, সে নিজের নাম রবিউল বললেও বাড়ি একেক সময় একেক জায়গায় বলছে। কখনো বরিশাল, কখনো ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা, কখনো কমলাপুর আবার কখনো নরসিংদীর রায়পুরা বলে জানিয়েছে। পিতা-মাতার নাম বা অন্যকোনো কিছুই সে বলতে পারছে না। আর মুখে আঘাত পাওয়ায় তার কথাও স্পষ্ট নয়।

এদিকে, সম্প্রতি ঢাকা কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করেন আফজাল হোসেন। তিনি এগারো সিন্ধুর ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। তার বাড়ি ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে। পিতা মন্নাফ মিয়ার চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম, পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ভৈরব বাজার রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকাগামী এগারসিন্দুর ট্রেনকে একটি মালবাহী ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের দুটি বগি উল্টে গেলে  হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়েছে।