রোগপ্রতিরোধ ও পুষ্টিগুণ সম্পূন্ন ৫টি গমের জাত আবিষ্কার
দিনাজপুরের নশিপুরের বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট রোগপ্রতিরোধ ও পুষ্টিগুণ সম্পূন্ন পাঁচটি গমের জাত আবিষ্কার করেছে। জলবায়ু মোকাবিলা, লবণাক্ততা সহিষ্ণু, মরিচারোগ, পাতা ঝলসানো ও ব্লাস্ট প্রতিরোধী, পুষ্টিগুণ সম্পন্ন গমের জাত উদ্ভাবনের কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানাট।
বর্তমানে দেশে ৭৫ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন গম উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৩৭টি উচ্চফলনশীল গমের জাত উদ্ভাবন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে বিডাব্লিউএমআরআই গম ২ তাপ সহিষ্ণু, বারি গম ৩৩ এবং বিডাব্লিউএমআরআই গম ৩ ব্লাস্ট প্রতিরোধী, বিডাব্লিউএমআরআই গম ৪ লবণাক্ততা সহিষ্ণুসহ পাঁচটি জাত আবিষ্কার করা হয়েছে। এসব গম বীজ কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বও জাতীয় বীজ বোর্ডের কারিগরি কমিটি বিডাব্লিউএমআরআই গম ৫ নামে প্রস্তাবিত উচ্চফলনশীল ও ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় বীজ বোর্ডের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে জাতটি সারা দেশে চাষের জন্য অবমুক্ত করা হবে।
বর্তমানে মার্কার অ্যাসিস্টেড সিলেকশন ও জাতের মেধাস্বত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্টিং করা হচ্ছে। মার্কার অ্যাসিস্টেড সিলেকশনের মাধ্যমে গমের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী জিন সমূহের উপস্থিতি নির্ণয় করে জাত অবমুক্তির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গমের প্রধান প্রধান রোগর মধ্যে গমের পাতা ঝলসানো, পাতার মরিচা ও ব্লাস্ট রোগ অন্যতম। বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে এসব রোগের জীবাণু শনাক্তকরণ, জীবাণু সংরক্ষণ ও রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনে কাজ করা হয়ে থাকে।
গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচনে মাঠে প্রাপ্ত ফলাফল গ্রিসহাউস নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত করা হয়। এখানে কৃত্রিম উপায়ে ইনোকোলেশন করে জাত পরীক্ষা করা হয়।
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট চলতি মৌসুমে সারা দেশে গমের জাত প্রদর্শনী, কৃষক ও সম্প্রসারণকর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বিশেষ করে অপ্রচলিত এলাকা যেমন : দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকা, পাহাড়ি এলাকা, রবি মৌসুমে সিলেট অঞ্চলের পতিত জমি, বরেন্দ্র এলাকায় গমের আবাদ সম্প্রসারণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো, সরেজমিন গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের স্বল্পতা রয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জমির ঘাটতি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পাশের সুগার মিলের ২০০ একর জমি পাওয়া গেলে বীজ উৎপাদন কার্যক্রম জোড়দার হবে এবং সারাদেশে গমের উৎপাদ বৃদ্ধিতে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ড. রেজাউল কবীর বলেন, আমাদের উদ্ভাবিত বীজ কৃষি সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট যৌথভাবে সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। জমি স্বল্পতার কারণে গবেষণার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্তপ্রবণ এলাকা, পাহাড়ি এলাকা, রবি মৌসুমে সিলেট অঞ্চলের পতিত জমি, বরেন্দ্র এলাকায় গমের আবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, গমের আবাদের জায়গায় আলু ও ভুট্টা স্থান করে নিয়েছে। ফলে গমের আবাদ কিছুটা কমেছে। তবে আবাদ সম্প্রসারণ করা হলে গমের ফলন বাড়বে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।