সাবেক ওসিসহ চারজনের যাবজ্জীবন
জামালপুরে সাবেক সেনা সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারিক হত্যা মামলায় চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবু তাহের এই দণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ নূরুল করিম ছোটন জানান, ২০১৬ সালের ১১ জুলাই সকালে জামালপুর পৌর এলাকার হাটচন্দ্রা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারিকের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোট ছেলে মাজহারুল হক বাবু তার বন্ধুদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ট্রেনে উঠেন। ট্রেনে বাবুর কাছে টিকিট চাওয়া হলে তিন জানান, তার টিকিট আরেক বন্ধুর কাছে, এতে বাবুকে ট্রেন থেকে নামিয়ে জামালপুর রেলওয়ে থানায় আটকে রাখা হয়। পরে তিনি তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারিককে ফোনে বিষয়টি জানান। তাঁর বাবা জামালপুর রেলওয়ে থানায় গিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তর্কবিতর্কের জেরে রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌড়চন্দ্র মজুমদার ও রেলের অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারিককে মাথায় ঘুষি মেরে গুরুতর আহত করেন রেলওয়ে পুলিশের কনস্টেবল তপন বড়ুয়া। আঘাতের কারণে তিনি স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ছিটকে রেললাইনে গিয়ে পড়েন। পরে তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ময়মনসিংহ সিএমএইচ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকেলে মারা যান তিনি। এই ঘটনায় পরের দিন তাঁর বড় ছেলে মিজানুর রহমান মুকুল বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।
মামলায় রেলওয়ে থানার পুলিশ কনস্টেবল তপন বড়ুয়া ও রেলের টিসি আনিসুর রহমানকে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ৪ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। পরবর্তী সময়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে জামালপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌড়চন্দ্র মজুমদার ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সোহরাব আলীকেও আসামি করা হয়। পরে আসামিদের তাদের নিজ নিজ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২১ সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ওই চার আসামির উপস্থিতিতে আজ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নূরুল করিম ছোটন। আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আমান উল্লাহ আকাশ এবং অ্যাডভোকেট এইচ আর জাহিদ আনোয়ার।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাদীপক্ষ।