সংসারে স্বচ্ছলতা এনে সাদ্দাম এখন এলাকার ‘ফ্রিল্যান্সার মডেল’

Looks like you've blocked notifications!
এলাকায় ‘ফ্রিল্যান্সার মডেল’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাদ্দাম হোসেন। ছবি : এনটিভি

সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে একসময় কাজের সন্ধানে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটেছেন বেকার তরুণ সাদ্দাম হোসেন। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে খুলনা গিয়ে শুরু করেন বিক্রয় প্রতিনিধির চাকরি। এরপর নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ। বেতন পেতেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ বেতনে ২০১০ সালের দিকে বিবাহিত জীবনে সংসারে টানাপোড়েন ছিল তার।

জীবন-জীবিকার তাগিদে সামান্য বেতনের চাকরি ছেড়ে সাতক্ষীরা গিয়ে শুরু করেন রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ। এ কাজে  যে পারিশ্রমিক পেতেন তা দিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। একসময় পুরোপুরি মিস্ত্রি হয়ে উঠেন। প্রায় পাঁচ বছর করেন মিস্ত্রির কাজ।

রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে সাদ্দাম হোসেন একটি মাধ্যমে জানতে পারেন-অনলাইনে কাজ করার খবর। রাজমিস্ত্রির কাজের ফাঁকে ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়েন অনলাইন প্লাটফর্মে। অল্পদিনের ব্যবধানে হয়ে উঠেন সফল ফ্রিল্যান্সার। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাদ্দাম হোসেনকে। রাজমিন্ত্রি থেকে হয়েছেন সফল ফ্রিল্যান্সার। উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পেলেও অনলাইন প্লাটফর্মে সফল মানুষ তিনি।

সাদ্দাম হোসেন তার সফলতার গল্প জানাতে গিয়ে বলেন, ‘জীবন সংগ্রামে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছি। তবে হাল ছাড়িনি। অনেক কষ্টের মাঝেও সফলতার মুখ দেখেছি। বিক্রয় প্রতিনিধি থেকে শুরু করে নিরাপত্তা প্রহরী আর রাজমিস্ত্রির কাজ করেছি। তবে পরিশ্রম অনুযায়ী বেতন পাইনি। তাই অনলাইন মাধ্যম বেছে নিয়েছি। অবশেষে সফলও হয়েছি।’

অনলাইনে কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সাদ্দাম বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সার বা অনলাইন মার্কেট প্লেসের কাজটি শুরু করেছি ২০১৩ সাল থেকে। তবে প্রথমে কাজ শেখার জন্য ভালো কোনো শিক্ষক পাইনি। তবে হাল ছাড়িনি। ‘ওয়েব ডিজাইন’ দিয়ে অনলাইন জগতে প্রথমে কাজ শুরু করি। এরপর ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ। সবমিলে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হচ্ছে। তবে ২০১৮ সালে এক মাসে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের রেকর্ড আছে।’

খুলনার কয়রা উপজেলার দুই নম্বর কয়রা গ্রামের এম. আব্দুস সাত্তার ও সায়রা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৩৪)। এছাড়া বড় ভাই ও ছোট দুই বোন রয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে নড়াইল উপশহর গারুচিরা বাজারের পাশে দলজিতপুর মৌজায় পাকাবাড়ি করে সপরিবারে বসবাস করছেন সাদ্দাম হোসেন।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয়ের ওপর নির্ভর করেই নড়াইল উপশহর সংলগ্ন দলজিতপুর মৌজায় পাঁচ শতক জমির ওপর একতলা পাকাবাড়ি, সাড়ে তিন শতক জমিতে মার্কেটসহ ১২৬ শতক চাষাবাদের জমি কিনেছেন সাদ্দাম হোসেন। ফ্রিল্যান্সিং করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন সাদ্দাম হোসেন। সরাসরি ও অনলাইনে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেনের ক্লাস করে অনেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সার। 

সাদ্দাম হোসেনের শিক্ষার্থী নড়াইলের দলজিতপুরের মেহেদী ও শাকিব, রাজশাহী জেলার রফিকুল ইসলাম এবং ময়মনসিংহের আমিনুল ইসলামসহ অনেকে জানান, সাদ্দাম হোসেনের কাছ থেকে তারা বিনামূল্যে ক্লাস করে ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এখন নিজেরাই দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ভালো উপার্জন করছেন। তারাও এখন অন্যদের ফ্রিল্যান্সিং শেখাচ্ছেন।

দুর্গাপুর এলাকার জাকির হোসেন বলেন, “সাদ্দাম এলাকার ‘ফ্রিল্যান্সার মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি নিজে সফল হয়েছেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ে অন্যদেরও সফল করার লক্ষ্যে সবসময় কাজ করে যাচ্ছেন।”

ফ্রিল্যান্সিং আয়ের ওপর নির্ভর করেই দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ চারজনের সংসার বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে পরিচালনা করছেন সাদ্দাম হোসেন। এলাকার তরুণ ও বেকার যুবকদের ‘মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। চাকরির ওপর শুধু নির্ভরশীল না হয়ে হতাশাগ্রস্থ জীবন থেকে বেরিয়ে এসে তরুণ প্রজন্মকে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার আহবান জানান সাদ্দাম হোসেন।