বাস পুড়িয়ে ভিডিও পাঠানো হতো শীর্ষ নেতাদের কাছে : র‍্যাব

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা। ছবি : এনটিভি

রাজধানীর মিরপুরের কালশীতে গত ১৮ নভেম্বর বসুমতি পরিবহণের একটি বাসে আগুন দেন কয়েকজন। এরপর বাস পোড়ার ভিডিও ধারণ করে হোয়াটসঅ্যাপে শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠান তারা। এভাবে বাস পোড়ানোর বিনিময়ে টাকা পান তারা। বাস পোড়ানোর ঘটনায় মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে র‍্যাব।  

আজ মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন  র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলেন—আল মোহাম্মদ চাঁন, মো. সাগর, মো. আল আমিন ওরফে রুবেল ও মো. খোরশেদ আলম। তারা সবাই যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি র‍্যাবের।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গতকাল সোমবার দিনগত রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত ১৮ নভেম্বর বসুমতি পরিবহণের বাসে অগ্নিসংযোগকারী চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্থানীয় যুবদলের কর্মী। তাদের দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিদের্শনায় গ্রেপ্তার আল মোহাম্মদ চাঁন রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবীর আশপাশের এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ করার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় চাঁন ও তার সহযোগী সাগর ও আলামিনসহ রাজধানীর মিরপুর-১১, তালতলা নাভানা, কালশী রোড, সিরামিক রোড এলাকায় সুবিধাজনক স্থানে সুবিধামতো সময়ে যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রেকি করে। গ্রেপ্তার আল মোহাম্মদ চাঁন যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য তার বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ২৫০ মিলিলিটার পেট্রোল বের করে এনার্জি ড্রিংকসের বোতলে ভরে ওইদিন সন্ধ্যায় আল আমিনের কাছে দেয়।’

র‍্যাব জানায়, ‘পরবর্তীতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ওই দিনগত রাত ১১টার দিকে বাসে অগ্নিসংযোগ করার জন্য রাজধানীর কালশী সড়কে রেকি করে। এ সময় কালশী সড়কে মসজিদের পাশে পার্ক করা বসুমতি পরিবহণের একটি বাস সুবিধাজনক হওয়ায় চাঁনের নির্দেশে সাগর ও আল আমিন বাসের কাছে যায় এবং আল আমিন বাসের মাঝের জানালা খুলে পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে সাগরের সাথে পালিয়ে যায়। এ সময় চাঁন রাস্তার আইল্যান্ডের ওপরে দাঁড়িয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের নির্দেশনা প্রদান ও ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। অন্য কোনো বিরোধী দলের সদস্যরা যাতে এ ঘটনার ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রেরণ করে কৃতিত্ব নিতে না পারেন, সেজন্য চাঁন বাসে আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খোরশেদকে ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ধারণ করে তাৎক্ষণিক তাকে পাঠাতে বলেন। পরে চাঁন ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠান বলে স্বীকার করেন। ওই কাজের জন্য চাঁন প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেলেও তিনি সাগর ও আল আমিনকে সাত হাজার টাকা করে প্রদান করেছেন বলে জানা যায়।’

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, ‘আল মোহাম্মদ চাঁন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় যানবাহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বে দেন। এ ছাড়াও তিনি নাশকতা ঘটানোর জন্য সমর্থকদের কাজ ভাগ করে দিতেন এবং টাকা সংগ্রহ করে সবার মাঝে বিতরণ করতেন বলে জানা যায়।’

র‍্যাব জানায়, ‘গ্রেপ্তার মো. সাগর, চাঁনের সহযোগী। তিনি চাঁনের নির্দেশে নাশকতার জন্য সুবিধাজনক টার্গেট ও স্থান রেকি করে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন। মো. আল আমিন চাঁনের সহযোগী ও সাগরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি চাঁনের নির্দেশে কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহণের বাসে অগ্নিসংযোগ করেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্লবী থানায় মাদক সংক্রান্ত দুটির বেশি মামলা রয়েছে।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘খোরশেদ আলম চাঁনের সহযোগী। তিনি চাঁনের নির্দেশে বসুমতি পরিবহণের বাসে অগ্নিসংযোগের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে চাঁনকে পাঠান। এ ছাড়াও তিনি রাজধানীর মিরপুর এলাকার যেকোনো প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন নাশকতা এবং সহিংসতার ছবি ও ভিডিও ধারণ করে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। এ সব ভিডিও গ্রেপ্তারকৃত চাঁনের মাধ্যমে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের কাছে পাঠাতেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’