তফসিলের বৈধতা নিয়ে রিটের শুনানিতে যা হলো আজ

Looks like you've blocked notifications!
হাইকোর্টের ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি শেষ হয়েছে। এদিন তড়িগড়ি তফসিল দেওয়ায় অনেক গঠনতান্ত্রিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না বলে দাবি করেন রিটকারী আইনজীবী। এ সময় আদালত বলেন, মিডিয়ার তথ্য বলছে, ২৯ দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে, আমেরিকা, ভারতে কয়টি দল তা জানতে চাওয়া হয়। অপর এক দাবিতে রিটকারী আইনজীবী ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতে ভোট হয়েছিল বললে আদালত তার প্রমাণ বা সাক্ষী আছে কি না জানতে চান। যদিও তা দিতে পারেননি তিনি। পরে আগামী রোববার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন হাইকোর্ট। 

সংসদ ভেঙে না দিয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করে তফসিল ঘোষণা করায় রিটটি করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। আজ বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। দ্বিতীয় দিনের শুনানি মুলতবির সঙ্গে সঙ্গে রিটকারীর আর কোনো বক্তব্য থাকলে তা লিখিত আকারে জমা দিতে বলা হয়।

দুপুর আড়াইটায় শুনানির সময় রিটকারীর আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ বলেন, মাই লর্ড একাদশ জাতীয় সংসদ এখনো বহাল রয়েছে। পাঁচ বছরের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। এই সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি শেষ হবে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হলে তখন দুটি সংসদ হবে। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় সংসদ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০০। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী  নির্বাচন পেছানোর সুযোগ রয়েছে।

এ সময় হাইকোর্ট জানতে চান আমাদের সুপ্রিম পাওয়ার কী? তখন অ্যাডভোকেট ইউনূস আলী বলেন, আমাদের সুপ্রিম পাওয়ার হলো সংবিধান। কিন্তু, সংবিধানের ৬৬(২) ছ—অনুযায়ী তো পার্লামেন্ট বহাল থাকাবস্থায় নির্বাচন করা যাবে না।  এমপি, মন্ত্রী পদ তো লাভজনক পদ। তারা ক্ষমতা হোল্ড করছেন। তাহলে এ পার্লামেন্ট থাকা অবস্থায় যদি নতুন পার্লামেন্ট করা হয়, তাহলে এমপি হবে ৬০০ জন। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন অনুষ্ঠানের আরও পাঁচ মাস সময় রয়েছে। অথচ, তড়িঘড়ি করে নির্বাচন করতে চাইছে কমিশন। অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় নির্বাচন প্রিম্যাচিউরড। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন করতে হলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, মন্ত্রিসভা ছোট করতে হবে। এসব কিছুই করা হয়নি।

হাইকোর্ট বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংবিধানের মধ্যে থেকে তাদের সুবিধামতো সময়ে নির্বাচন দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। আর এক সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তো ২০১৮ সালে পার্লামেন্টে সেটেল হয়ে গেছে।

জবাবে আইনজীবী বলেন, সংবিধান গণতন্ত্রের কথা বলেছে। অথচ, গণতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন হচ্ছে না। কেননা এবারের নির্বাচনে সব দল অংশ নিচ্ছে না। এত তড়িগড়ি করে তফসিল দিল যে অনেক গঠনতান্ত্রিক দল অংশ নিতে পারছে না। জবাবে আদালত বলেন, এটা দিয়ে আপনি কী বুঝাতে চেয়েছেন?  আমেরিকা, ভারতে কয়টি দল? জবাবে আইনজীবী বলেন, দুই-তিনটি দল। 

এ সময় আদালত বলেন, মিডিয়াতে দেখলাম দেশের ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জবাবে আইনজীবী বলেন, এবারের নির্বাচনে যেসব দল এখনো প্রার্থী হচ্ছে তারা তো একটিও আসন পাবে না। এ সময় আদালত বলেন, নির্বাচন  না হলে সংবিধান শূন্য থাকবে। জবাবে এ আইনজীবী বলেন, সংসদ ভেঙে দিতে হয় নির্বাচনের ৯০ দিন আগে। ২০১৪ সালে ১৫৪টি আসনে ভোট ছাড়া নিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০১৮ সালে আমি নির্বাচন করেছিলাম। সেখানে দিনের ভোট আগের রাতে করানো হয়। যে কারণে কেউ ভোট দিতে পারেনি।

এ সময় আদালত জানতে চান, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতে ভোটের বিষয়ে আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে বা সাক্ষী আছে? জবাবে আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ বলেন, মাই লর্ড, সাক্ষী দেশের ১৮ কোটি জনগণ। আমি নিজে প্রার্থী ছিলাম ঢাকা-৮ আসনে থেকে। দেখলাম আগের দিন রাতে ভোট হয়ে গেছে।

এ সময় আাদলত বলেন, এসব কথা তো মঞ্চের কথা। কোর্টে কথা বলতে হবে ডকুমেন্ট দিয়ে। এ সময় আদালত জানতে চান, আপনি মামলা করলেন না কেন?

জবাবে আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ বলেন,  মামলা তো করতে হয় ট্রাইব্যুনালে। এ মামলা করার পর নিষ্পত্তি হতে হতে পাঁচ বছর পার হয়ে যায়।  এ সময় আইনজীবী বলেন, শুনানি মুলতবি করা হোক।   

এরপর শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, সংবিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ রিটকারী আদালতের সময় নষ্ট করেছে। তাই জরিমানাসহ রিট খারিজ করা হোক।

পরে আদালত আগামী ১০ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। ওই সময়ে আইনজীবীকে কোনো বক্তব্য থাকলে তা লিখিত আকারে দিতে বলেছেন আদালত।  

এর আগে গত ২৯ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ। তার আগে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) এই আইনজীবী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ পেছানোর দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন পেছানোর সুযোগ রয়েছে বলে লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়।