ভৈরব মুক্ত দিবস আজ

Looks like you've blocked notifications!
স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারীদের স্মরণে শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিভাস্কর্য দুর্জয় ভৈরব। ছবি : এনটিভি

ভৈরব মুক্ত দিবস আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে ভৈরবকে মুক্ত করতে সক্ষম হন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হলেও নদীবন্দর ভৈরব তখনও ছিল অবরুদ্ধ। চূড়ান্ত বিজয়ের স্বাদ পেতে ভৈরববাসীকে অপেক্ষা করতে হয় আরও তিন দিন।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের পানাউল্লাহরচর এলাকায় ব্রক্ষপুত্র নদের তীরে পারাপারের জন্য অপেক্ষমান নিরস্ত্র-অসহায় পাঁচ শতাধিক সাধারণ মানুষকে ব্রাশফায়ারে হত্যার মধ্যদিয়ে ভৈরবের দখল নেয় পাকহানাদার বাহিনী। ওই স্থানেই নিহতদের গণকবর দেয় আশপাশের মানুষ। পানাউল্লাহরচর বর্তমানে ভৈরবের বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত। নির্মিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ।

১৩ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনী পূর্বদিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আশুগঞ্জ থেকে এগিয়ে আসা মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর গতিরোধ করতে ভৈরবে অবস্থিত ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের মেঘনা নদীর উপর নির্মিত ভৈরব রেলওয়ে সেতু শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়।

১৪ এপ্রিলের পর থেকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশিয় দোসররা কৌশলগত কারণে ভৈরবে শক্ত অবস্থান ধরে রাখে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পরাজিত পাকবাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে ভৈরবে এসে অবস্থান নেয়। ফলে জনবল ও অস্ত্র-শস্ত্রে ভৈরবে পাকবাহিনীর শক্তি বহুগুণ বেড়ে যায়।

ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী রাজধানীর দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। রাজধানীর দিকে যাওয়ার পথে একে একে বিভিন্ন অঞ্চল পাকহানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত হয়। সে সময় ভৈরবে তাদের শক্তিশালী ঘাটি থাকায়, যৌথবাহিনী ভৈরবকে মুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেও ভৈরব অবরুদ্ধই থেকে যায়। স্থানীয় জব্বার জুট মিলে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ হাজার পাকবাহিনীকে বিপুল অস্ত্র-শস্ত্রসহ চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী।

১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী পুরো ভৈরব শহর ঘেরাও করে পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। ১৯ ডিসেম্বর সকালে ভৈরব রেলস্টেশনে মিত্র বাহিনীর মেজর মেহতার কাছে পাকবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার সায়দু‌ল্লাহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

মুক্ত হয় শহীদ আতিক, ক্যাডেট খোরশেদ আলম, আলকাছ মিয়া, আশুরঞ্জন দে, আক্তার মিয়া, নোয়াজ মিয়া, আবু লায়েছ মিয়া, সহিদ মিয়া, নায়েব আলী, মো. গিয়াস উদ্দিন, রইছ উদ্দিনসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও অগণিত সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত ভৈরব শহর।

স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারীদের স্মরণে শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিভাস্কর্য ‘দুর্জয় ভৈরব’। এদিন ভৈরববাসী নানা কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে।