মিয়ানমার সীমান্তে মর্টার শেলের শব্দে কাঁপছে এপারের গ্রাম
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে ফের আতঙ্কে সীমান্তবাসী। কয়েক সপ্তাহ ধরে আবারও গোলাগুলির শব্দে মাঝেমধ্যেই কেঁপে উঠছে সীমান্ত অঞ্চল। আজ সোমবারও (২৯ জানুয়ারি) সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
মিয়ানমারের ওপারে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মি (এএ), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে দুই বছর ধরে সেদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর এই সংঘর্ষ চলে আসছে। সেখানে নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ায় আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায়। তবে বাংলাদেশে প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম ইউনিয়নের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে উত্তেজনা শুরু হয়। সেই উত্তেজনা চলমান রয়েছে এখনও। থেমে থেমে গুলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে এপারের গ্রামগুলো। এতে বাংলাদেশের এপারের সীমান্তজুড়ে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। সর্বশেষ গত শুক্র ও শনিবার মিয়ানমারের ওপারে চাকমাপাড়া এলাকায় আরএসও কর্তৃক একটি ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে নতুন করে এই উত্তেজনা শুরু হয়। জানা গেছে, বাংলাদেশের বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার ওপারে মিয়ানমারের মংডু ও বুচিদং এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সেদেশের স্বাধীনতাকমী দলের মধ্যে সংঘাত চলছে। এই দুটি জেলা বাংলাদেশ লাগোয়া হওয়ায় ওপারে গুলাগুলি হলে এপারের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। কারণ অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে এই সংঘাত চলছে।
সীমান্তের বাসিন্দারা জানায়, মিয়ানমারের রাইট ক্যাম্প, লেফট ক্যাম্প ও ভাজাবনিয়া ক্যাম্প এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা বেড়েছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বাধীনতাকামী দলের সঙ্গে এসব ক্যাম্পের সদস্যদের মধ্যে সংঘাত চলছে। এদিকে গত কয়েকদিনের উত্তেজনার পর নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে মিয়ানমারের এক উপজাতি নাগরিককে আটকের ৪ ঘণ্টা পর পুশব্যাক করা হয়। গত শনিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম রেজুআমতলী বিওপির বিশেষ টহল দল তাকে আটক করে পুশব্যাক করে। আটক মিয়ানমার নাগরিকের নাম মংপ্রুশি মারমা (২০)। তিনি মিয়ানমারের মংডু জেলার মংডু উপজেলাধীন থুয়াংচি মারমার ছেলে। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধীন সীমান্ত ৩৯ নম্বর পিলার এলাকা থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রেজু মগপাড়া ব্রিজসংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে বিজিবি। পরে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাইশফাঁড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত পিলার ৩৭ এলাকার আমবাগান দিয়ে মিয়ানমার অভ্যন্তরে পুশব্যাক করা হয় বিকেলে।
এদিকে মিয়ানমারের ওপারে উত্তেজনা চললেও এপারে তার কোনো প্রভাব নেই বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যাতে করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাই সজাগ রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টারশেল নিক্ষেপ, গোলাগুলির শব্দের আতঙ্কে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।