দিনে সাধু রাতে ডাকাত, আটক ৩৬

Looks like you've blocked notifications!

কেউ বাসের হেলপার, ড্রাইভার, দোকানের কর্মচারী; কেউ বা আবার নির্মাণশ্রমিক কিংবা পুরাতন মালামাল ক্রেতা, রাজমিস্ত্রী। বাদ পড়েনি সবজি বিক্রেতাও। তাদের এই পেশার বাইরেও আছে আরেক নেশা। দিনের বেলার ভিন্ন ভিন্ন পেশার এমন কিছু মানুষের চরিত্র সন্ধ্যা হলেই বদলে যায়। আঁধার নামতেই শুরু করেন ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও তার আশপাশের এলাকায় বেশ দাপট তাদের। যাদের প্রত্যেকের নামে রয়েছে একাধিক মামলা। খেটেছেন জেলও। বেরিয়ে আবারও জড়িয়েছেন গ্যাং কালচারে।

রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ এলাকায় ‘কিশোর গ্যাং’-এর বিভিন্ন গ্রুপের ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর বেড়িয়ে আসে এসব তথ্য। র‍্যাবের পক্ষ থেকে এসব দাবি করা করা হয়েছে।

যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছে কিশোর গ্যাং ‘পাটালি গ্রুপ’র অন্যতম মূলহোতা সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিব এবং ‘লেভেল হাই’র মো. শরিফ ওরফে মোহনকে। এ ছাড়া ‘চাঁন গ্রুপ’, ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’সহ বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল দেশীয় অস্ত্র।

মোহাম্মদপুরের বসিলায় র‌্যাব-২-এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আজ শনিবার দুপুরে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক (সিও) ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান। তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। এসব ঘটনায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা হয়েছে। অতি সম্প্রতি মোহাম্মদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ ও তার আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পেয়ে র‌্যাব টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে। শুক্রবার রাতে র‌্যাবের একাধিক দল মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজন পাটালি গ্রুপের, ছয়জন ‘লেভেল হাই’, ছয়জন ‘চাঁন গ্রুপ’, পাঁচজন ‘লও ঠ্যালা গ্রুপ’ এবং সাতজন ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’র সদস্য। বাকি সাতজন অন্য গ্রুপের সদস্য। এদের গ্রুপে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য থাকে।

র‌্যাব-২ অধিনায়ক বলেন, পাটালি গ্রুপটি সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিবের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে। নিজেদের মধ্যে অন্তকোন্দলের কারণে তারা দু’তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়। লেভেল হাই গ্রুপটি শরিফের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেপ্তাররা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো।

মো. আনোয়ার হোসেন খান আরও বলেন, তারা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারাল অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেশীয় ধারাল অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত। মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত তারা।  

গ্রেপ্তারদের পেশা সম্পর্কে মো. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, তারা বিভিন্ন গাড়ির হেলপার ও ড্রাইভার, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা ইত্যাদি পেশার আড়ালে তারা মূলত মোহাম্মদপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতো বলে জানা যায়।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিব ‘পাটালি গ্রুপ’-এর মূলহোতা। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ডিস ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৫ থেকে ২০ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করেন। তিনি এই সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছিল। গ্রেপ্তার রানা শিকদার, জুয়েল মিয়া ও সাগর গ্রেপ্তার ফর্মা সজিবের সহযোগী। তারা গ্রেপ্তার ‘পাটালি গ্রুপ’র ফর্মা সজিবের নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত ১১টির বেশি মামলা রয়েছে এবং এ সব মামলায় কারাভোগ করেছে।

মো. আনোয়ার হোসেন খান আরও বলেন, গ্রেপ্তার শরিফ ওরফে মোহন (২১) লেভেল হাই গ্রুপের মূলহোতা ও সন্ত্রাসী হায়াত ওরফে টাকলা হায়াতের অন্যতম প্রধান সহযোগী। শরিফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত আটটির বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় কারাভোগ করেছে।

গ্রেপ্তার সাকিব ওরফে রিয়াম ‘চাঁন গ্রুপের’ অন্যতম সহযোগী সদস্য। তিনি ২০১৮ সালে বরিশাল হতে ঢাকায় এসে ঢাকা উদ্যান এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টসে চাকরি করেছেন। ২০২১ সালে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে চাকুরির সময়ে ‘চাঁন গ্রুপ’ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত তিনটির বেশি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেছেন।

‘মাউরা ইমরান গ্রুপের’ সদস্য গ্রেপ্তার ইমরান ওরফে মাউরা ইমরান এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ডিস ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ১৫ থেকে ২০ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করেন। আগে তিনি মোহাম্মদপুর এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তার বিরুদ্ধে চারটির বেশি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেছে।

রাকিব ওরফে মুরগি রাকিবের জন্ম বরিশাল এলাকায়। তিনি বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টসে চাকরি ও ডিসের লাইনে চাকরি করতেন। ২০২০ সালে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরির সময় ‘ল্যাও ঠ্যালা’ গ্রুপে যোগ দেন। তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক সংগ্রহ ও মাদক পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত দুটির বেশি মামলায় কারাভোগ করেছেন তিনি।