খুলনায় ৪১৮ কিমি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে বছরের পর বছর!

Looks like you've blocked notifications!
খুলনায় খোঁড়াখুঁড়িতে সড়কের বেহাল অবস্থা। ছবি : এনটিভি

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মোট সড়ক ৬৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪১৮ কিলোমিটারে গত তিন বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। খোঁড়াখুঁড়িতে সৃষ্ট গর্তের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রাণহানি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। এমনকি, সড়কে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার সংস্কার কাজ একইসঙ্গে চলছে বছরের পর বছর। 

বিভাগীয় শহর খুলনা মহানগরীতে কেসিসির পাশাপাশি সড়কের দায়িত্বে রয়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও খুলনা জেলা পরিষদের হাতে। কিন্তু সরকারি এই সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকার কারণে নাগরিকদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে খুলনা-শিপইয়ার্ড বাইপাস সড়কের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ চলছে গত সাত-আট বছর ধরে। এ নিয়ে নাগরিক কমিটি মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছে।

খোঁড়াখুঁড়িতে সৃষ্ট খাদে পড়ার পৃথক ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দা সাংস্কৃতিক কর্মী লুৎফুল নাহার পলাশী। তিনি বলেন, ওয়াসা পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ করে গেলেও সড়কটির সংস্কার কাজ করা হচ্ছে না। এতে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ স্থানীয় নাগরিক প্রতিনিধি হুমায়ুন কবীর বাবুলসহ একাধিক জ্যেষ্ঠ নাগরিকের।  

খুলনা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান সেলিম আহমেদ বলেন, ‘খুলনা ওয়াসার ২৩ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এই প্রকল্পতে ১৭৭ কিলোমিটার সড়ক খুঁড়ে পাইপ স্থাপন করা হচ্ছে। একইভাবে সার্ভিস সংযোগের জন্য ৭৩ কিলোমিটার সড়ক খনন করে পাইপ স্থাপন প্রকল্প চলমান রয়েছে। ২০২০ সালে শুরু করে ২০২৩ সালে শেষ করার কথা থাকলেও কাজটি শুরু হয়েছে মূলত ২০২২ সালে এবং শেষ হবে ২০২৫ সালে।’

সেলিম আহমেদ আরও বলেন, ‘ইতিপূর্বে পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজের সময় ওয়াসা সড়ক খুঁড়ে পাইপ স্থাপন করে। তারাই আবার সঙ্গে সঙ্গে সেই সড়কের সংস্কার কাজ করে দিয়েছে। কিন্তু এবার সিটি করপোরেশন নিজেরা সড়ক মেরামত করবে জানিয়ে তাদের অর্থ প্রদান করতে বলেছে। পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প কাজ এখন পর্যন্ত ৩৭ শতাংশ সমাপ্ত হয়েছে। এই অংশের জন্য খুলনা সিটি  করপোরেশনকে দুই দফায় টাকা প্রদান করা হয়েছে।’

খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের হাতে সংস্কার কাজের দায়িত্ব থাকলে তা কাজ শেষের সঙ্গে সঙ্গেই করে দেওয়া যেত। কিন্তু এবার সিটি করপোরেশন সড়ক মেরামতের দায়িত্ব নেওয়ায় আমাদের কিছু করার নেই।’

খুলনা ওয়াসার এমডি আরও বলেন, ‘সড়ক মেরামতে দেরি করায় জনগণ ওয়াসাকে গাল দেয়, অথচ সড়ক সংস্কারের দায়িত্ব কেসিসির। এজন্য তাদেরকে ফান্ড দেওয়া হয়েছে, যাতে দ্রুত সড়কগুলো মেরামত করা সম্ভব হয়। এমনকি, কাজ শেষ হওয়া সড়কগুলোর তালিকাও কেসিসিকে প্রদান করা হয়েছে।’

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) দুটি ও খুলনা ওয়াসার একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে কেসিসির জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬৮ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এটি ২০২০ সালে শুরু করে ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। অপরটি হলো খুলনা সিটি করপোরেশনের ৬০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুর্নবাসন প্রকল্পের আওতায় ২৭৪ কিলোমিটার সড়কের কাজ যা ২০২০ সালে শুরু হয়। এটিও ২০২৩ সালে শেষ করার কথা ছিল, কিন্তু প্রকল্প ব্যয়  ৬৫২ কোটি টাকা ও সময়সীমা ২০২৫ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যদিকে, খুলনা ওয়াসার ২৩ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৫০ কিলোমিটার সড়ক খুঁড়ে পাইপ স্থাপন করা হচ্ছে। ২০২২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৭ শতাংশ।

সড়কের বেহাল অবস্থায় নগরবাসীর দুর্ভোগের জন্য ওয়াসাকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওয়াসার সঙ্গে আমাদের সমন্বয় আছে। কিন্তু, তারা একটি কাজ শেষ করতে ছয় মাস লাগাচ্ছে।’  তবে  সড়ক মেরামতের জন্য সিটি করপোরেশনকে ওয়াসার অর্থ দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

সড়কের সংস্কার কাজের জন্য ২৫০টি টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক দ্রুত কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে এবং বৃষ্টির মৌসুম থাকায় সংস্কার কাজ শুরু করতে দেরি হয়।  সড়ক সংস্কারের জন্য আরও ১৫০০ কোটি টাকা চাহিদার কথা জানানো হয়েছে।’