মাছ ব্যবসায়ী নান্নু হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের ফাঁসি চাইলেন সংসদ সদস্য

Looks like you've blocked notifications!
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রউফ। ছবি : এনটিভি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নৌকার সমর্থক মাছ ব্যবসায়ী নিহত আমিরুল ইসলাম নান্নুকে (৫২) বিএনপিনেতা দাবি করে এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও দোষীদের ফাঁসি চেয়েছেন কুষ্টিয়া-৪ কুমারখালী-খোকসা আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রউফ। আজ রোববার (১৭ মার্চ) বিকেলে কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আমিরুল ইসলাম নান্নুকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। কিন্তু খুবই দুঃখজনক হলো এ ঘটনায় ষড়যন্ত্র করে আমার সমর্থকদের মামলার আসামি করা হয়েছে।

সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ আরও বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় একজন খুন হয়েছেন। সেই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আমরাও চাই। আমি নাম বলব না, কিন্তু একটি পক্ষ পেছন থেকে ষড়যন্ত্র করে একজন বিএনপিনেতাকে নৌকার কর্মী দাবি করে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘নান্নু হত্যার সঙ্গে আমি বা আমার কোনো নেতাকর্মী বিন্দুমাত্র জড়িত নয়, কিন্তু কিছু মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। মামলায় এমন কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে, যারা এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই জানত না। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।’

মামলার ৬ নম্বর আসামি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগনেতা মিজানুর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে সংসদ সদস্য বলেন, মিজানকে প্রতিপক্ষ গ্রুপ আগে থেকেই হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবুও পুলিশ তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মামলার আসামি করেছে।’

পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে এই সংসদ সদস্য দাবি করেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কাজ করার জন্য পুলিশও মিজানকে হুমকি দিয়েছিল। যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগ ষড়যন্ত্রের স্বীকার।’

এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মনির হাসান রিন্টুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার রাতে কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামে একটি কলাবাগান থেকে আমিরুল ইসলাম নান্নুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত নান্নু উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মৃত আবদুল জলিলের ছেলে। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নৌকার প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জ নান্নুকে তাঁর সমর্থক দাবি করে স্বতন্ত্রপ্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রউফের সমর্থকরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় নিহত নান্নুর লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে রাতেই প্রতিপক্ষের কয়েকজনের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অন্তত তিনটি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

পুলিশ ও নিহত আমিরুলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আমিরুল ইফতার শেষ করে বাড়ি থেকে কেশবপুরে তাঁর ইজারা নেওয়া পুকুরে যাচ্ছিলেন। পথে তাঁর মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাঁকে জোর করে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। সেখানে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়।

নিহত নান্নুর বোন রোজিনা খাতুন ও চাচাতো ভাই আমিরুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি নৌকার সমর্থক ছিলেন।

ঘটনার পরের দিন নিহত নান্নুর ভাই জহুরুল ইসলাম বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ২৩ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ভুক্তভোগী একটি পরিবার পাল্টা মামলা করেছে। মামলায় পুলিশ যদুবয়রা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।