ছয় কোটি টাকা নিয়ে উধাও কর্ণফুলী সমবায় সমিতি, দিশেহারা গ্রাহকরা
৬৪ বছরের সাবেক কলেজ শিক্ষক জিনাত রশিদ আজাদ। চাকরি জীবনের সব টাকা জমা রেখেছিলেন কর্ণফুলী সমবায় সমিতিতে। নিজের বাসায় ভাড়া নিয়ে অফিস চালানোর সুবিধার্থে ও এলাকার পরিচিত লোকজন থাকায় বিশ্বাস করে রেখেছিলেন টাকাগুলো। শুধু শিক্ষক জিনাত রশিদ নন, তার মতো উপজেলার খাদিজা, রাসেল আল মামুনসহ শতাধিক আমানতকারী টাকা রেখেছিলেন এই কর্ণফুলী সমবায় সমিতিতে। তাদের জমাকৃত আনুমানিক ছয় কোটি টাকা নিয়ে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায় সংস্থাটি।
জানা গেছে, কর্ণফুলী সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়ন এর বামনসাতা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রতারণার কৌশল হিসেবে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পল্লীসেবা নামে আরেকটি সংস্থা খোলেন একই উপজেলাতে।
ভুক্তভোগী জিনাত রশিদ আজাদ বলেন, ‘২০১৮ সালের আগস্ট মাসে আমার বাসায় নিচতলা ভাড়া নেন তারা। ভাড়া নেওয়ার সময় সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, সভাপতি জাহিদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক আশা খাতুন, এরিয়া ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম, শাখা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম ও অডিট অফিসার মিনহাজসহ পরিচিত অনেকে ছিলেন। তাই আমি সরল বিশ্বাসে তাদের অফিস করার জন্য ভাড়া দিয়েছিলাম। একসময় তাদের প্রলোভনে আমি আমার চাকরি জীবনের সমস্ত টাকা ২৮ লাখ তাদের সমিতিতে জমা রাখি। তাদের কার্যক্রম প্রথম তিন বছর ভালো ছিল। একসময় তাদের লেনদেনের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিষয়টি জানতে পেরে আমিসহ অনেকে তাদের কাছে জমানো আমানত ফেরত চাই। কিন্তু তারা আজ নয়, কাল দিব বলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে একদিন রাতের আধারে তারা উধাও হয়ে যায়। অফিসে ঝুলছিল তালা। তখন আমাদের হা-হুতাশ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম গা ঢাকা দেয়। আর সমিতি জানুয়ারি মাসে বন্ধ করে সব স্টাফ উধাও। টাকা দিয়ে এখন আমরা অনেকেই পথে বসার উপক্রম হয়েছি। আমরা প্রতিকারের আশায় থানায়, ইউএনও, র্যাব, পিবিআই এ অভিযোগ দিয়েছি। এ ছাড়া আদালতে মামলা করা হয়েছে।’
ওই সমিতিতে আফরোজা বেগম দুই লাখ, খাদিজা ২৮ লাখ, রাসেল আল মামুন দুই লাখ, বেনজির ইয়াসমিন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা রেখেছিলেন অতিরিক্ত মুনাফার লোভে। এ ছাড়া শহীদ, কার্তিকসহ শতাধিক গ্রাহক প্রায় ছয় কোটি টাকা সঞ্চয় রেখেছিলেন কর্ণফুলী সমিতিতে। তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘মাসে মাসে প্রতি লাখে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে সমিতিতে সঞ্চয় রাখার উৎসাহ প্রদান করেছিল সমিতির লোকজন। আমরা তাদের প্রতারণা বুঝতে পারিনি।’
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার বিচারসহ পাওনা টাকা ফেরতের দাবিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ সদর উপজেলার সার্কিট হাউজ এর সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। নওগাঁর বেশ কয়েকটি উপজেলায় কর্ণফুলী নামে শাখা পরিচালিত হতো বর্তমানে সেই শাখাগুলোও তালাবদ্ধ।
মূলহোতা আশরাফুল ইসলাম পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। সমিতির সভাপতি জাহিদ হাসান, শাখা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম, এরিয়া ম্যানেজার জাহিদুল ইসলামও মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান আজ বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘কর্ণফুলী এনজিও ছয় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনা শুনেছি। এখন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব-৫ জয়পুরহাট কোম্পানি কমান্ডার অফিস থেকে জানানো হয়, এই বিষয়টি নিয়ে কার্যক্রম চলমান আছে। যেকোনো সময় অপরাধীদের আটক করা হবে।