চালের বাজারে আবারও অস্থিরতা, কেজিতে বেড়েছে ৪-৫ টাকা
খাদ্য ভাণ্ডার দিনাজপুর জেলায় এবং কুষ্টিয়ার খাজানগরে আবারও চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। আজ বুধবার (২০ মার্চ) দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় বাহাদুর বাজার ও কুষ্টিয়ার খাজানগরে গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
গত এক সপ্তাহ আগে দিনাজপুরে মিনিকেট চাল ৬৪ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। গুটি স্বর্ণা সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫ টাকা। বর্তমানে বেডে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা। বিআর ২৮ চাল এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৪ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়, বিআর ২৯ চাল সপ্তাহ আগে ছিল ৫২ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা। ২৫ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১২৫ টাকা। ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
দিনাজপুরের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী রঞ্জিত জানান, মিল গেট থেকে বেশি দাম চাল কিনতে হচ্ছে তাঁদের। মিলমালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের এই দাম নিয়ন্ত্রণ করছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী রঞ্জিত আরও জানান, দিনাজপুরে চালের দাম একবার বাড়লে আর কখনই কমে না। বাজারে মনিটরিং না থাকায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিক, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ চাল কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে।
চাল কিনতে আসা জহুরুল জানান, সারা দিন অটো চালিয়ে যা আয় রোজগার করেন, তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে। হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েছেন।
দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি হুমায়ুন রেজা শামীম জানান, দিনাজপুরের হাট-বাজারে চালের সরবরাহ নেই।
মিলমালিকরা চাল কিনতে পারছেন না। সামনে ইরি ধান উঠলে চালের দাম কিছুটা কমবে। ধান না উঠা পর্যন্ত চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
দিনাজপুর জেলায় যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তা জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ হয়ে থাকে।
ভোক্তারা বলছেন, বাজারে তদারকি না থাকায় চালের বাজার আবার অস্থির হয়েছে। বেশ কিছুদিন চালের বাজার স্থিতিশীল থাকার পর আবারও চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা গেলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
জেলার যেসব মিলমালিক ও মজুদদার রয়েছেন তাদের গুদামে অভিযান চালালে বাজার স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পবিত্র রমজান মাসে চালের দাম বৃদ্ধিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, দাম বাড়ার পেছনে পাইকারি ব্যবসায়ী, মিলমালিক ও মজুদদারদের হাত রয়েছে।
এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ী এরশাদ জানান, হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁর দোকানে বিক্রি অনেক কমে গেছে।
কুষ্টিয়া থেকে সাবিনা ইয়াসমীন শ্যামলী জানান, সব রকম চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে। প্রকার ভেদে এখানকার মিলগুলোতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন-চার টাকা।
মিলমালিকরা বলছেন ধানের দাম বৃদ্ধি ও দেশে সরু ধানের সংকট থাকায় বেড়েছে চালের দাম। চরম লোকসানের কারণে খাজানগরের বেশিরভাগ মিল বন্ধের আশঙ্কাও করছেন তাঁরা।
এদিকে রমজান মাসকে ঘিরে এমনিতেই সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম চড়া তার ওপর নতুন করে চালের দাম বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে জেলার নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মিলগুলোতে প্রশাসনের কঠোর মনিটরিংয়ের দাবি তাদের।