জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি ইস্যু তৈরি করতে ভারত বিরোধিতা করছে : নানক

Looks like you've blocked notifications!
আজ শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। ছবি : এনটিভি

জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বিএনপি এখন সস্তা ইস্যু তৈরি করতে ভারতীয় পণ্য এবং ভারতের বিরোধিতা করছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।

আজ শনিবার (২৩ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পাটমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পাটমন্ত্রী বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা একটি কঠিন লড়াইয়ে রয়েছি। আমাদের এখন খুব সহজ সময় যাচ্ছে না। আবার এই বিএনপি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. মঈন খানেরা যখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেকায়দায় পড়েছেন, তখনই সস্তা ইস্যু তৈরি করে ভারত বিরোধিতা করে ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলেছেন। এই ভারতীয় পণ্য বর্জন, ভারত বিরোধিতা হলো ওদের রাজনৈতিক হালে পানি পাওয়ার জন্য অপচেষ্টা মাত্র। কিন্তু তাঁরা জানে না, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া ভারত ইস্যুকে ঘিরে যে ‘ভারত জুজুর রাজনীতি’করেছিল সেই বাংলাদেশ আজকে আর নেই।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে খুনিদের অবাধ বিচরণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। যাদের আমরা মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত করেছিলাম, সেই ঘাতকদের অবাধ চারণভূমিতে পরিণত করেছিল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এরশাদরা। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আবার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জামায়াত-শিবির কিন্তু বসে নেই। ছাত্রলীগকে মনে রাখতে হবে ওরা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। যখন আমি জিয়াউর রহমান, এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এবং সারা দেশে বলেছি একটি জাতি সাপ আমাদের পাশে পাশে চলছে। এই সাপটি যখন সুযোগ পাবে তখনই ছোবল দিবে, এই জাতি সাপ জামায়াতকে শুধু পিটুনি দিলে চলবে না, মাথায় আঘাত করে এই দেশ থেকে নিঃশেষ করতে হবে।

স্বাধীনতার ঘোষক প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, যারা বলেন, হুইসেল বাতি দিয়েছেন আর স্বাধীনতা এসে গিয়েছে। যারা ৫২, ৫৪ দেখেনি; যেই জিয়াউর রহমান ৫২, ৫৪, ৫৬, ৫৮, ৬৬, ৬৯ ও ৭০ এর নির্বাচন দেখেনি। সেই জিয়াউর রহমান হঠাৎ করে এসে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের বেতার কেন্দ্রে এসে স্বাধীনতার ঘোষণা করে ঘোষক হয়ে গেলেন। যদি জিয়াউর রহমান ঘোষক হয়, আমিও বরিশালে মাইকিং করেছিলাম বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা; তাহলে তো আমিও ঘোষক। যদি জিয়াউর রহমান ঘোষক হয়, তাহলে অন বিহ্যাব অফ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে স্বাধীনতার কথা বলে তাহলে কি জাহাঙ্গীর কবির নানক কি ঘোষক? তাহলে কি কলরেডি ঘোষক? এই হলো ইতিহাস বিকৃতি!

এর আগে নানক বলেন, মুজিব শব্দের অর্থ উত্তরদাতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে উত্তর দিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি এক ধরনের মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠেছেন যে আমাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং মানুষকে নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন, ৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের (মাওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতির মূল ধারায় যুক্ত হন, ১৯৫৩ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ সর্ব প্রথম সদস্য নির্বাচিত হন।

নানক আরও বলেন, পাকিস্তানের নামে যে জাতি রাষ্ট্রটি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প হয়ে জন্ম হয়েছিল এবং ধর্মান্ধতায় নিপতিত একটি দেশ। সেই ধর্মকে হাতিয়ার করে পাকিস্তানিরা শাসন শোষণ করেছেন এবং যে সমাজ ব্যবস্থায় আমার মা যখন বরিশাল শহরে রিকশায় চড়তেন। বোরকা-দোপাট্টা পড়ে রিকশায় ওঠার পরও পুরো রিকশাটিকে শাড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হতো, এই ছিল সেই সময়ের ধর্মান্ধতার পরিস্থিতি। এই ধর্মান্ধ রাষ্ট্রের জনগণ যারা শোষিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়েছেন টুঙ্গিপাড়ার সেই খোকা এসেছিলেন এক আলোকবর্তিকা হয়ে। সেই বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি ও জিন্নাহর বিরুদ্ধে যে উর্দু রাষ্ট্রভাষা নয়, বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এবং ভাষা আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৫২ এর পর ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাঁর জন্য সেইদিন যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করতে পেরেছিলেন।

৭ মার্চে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রসঙ্গে নানক বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দশ লক্ষাধিক ১১০৮ শব্দের চিরকুটে লিখে পয়েন্ট লিখে নিয়ে বক্তৃতা দেননি। তরপরেও তার ওপর অনেক চাপ ছিল। কিন্তু কারও কথা কানে নেননি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তখন বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন তুমি সারাজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করেছো, বাঙালির স্বার্থে পক্ষে যা বলা দরকার তাই তুমি করবা। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ওই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে জাতিকে স্বাধীনতার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি, গেরিলা যুদ্ধের মতো দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন এই ঐতিহাসিক ভাষণে। ৫১ বছর ৮দিন বয়সী বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণের শুরুতে আপনি বলেছিলেন এবং পরবর্তীতে কর্তৃত্ব জায়গা থেকে তুমি বলে সম্বোধন করেছিলেন। আমরা তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক লড়াই করেছিলাম।

এসময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তানভীর হাসান সৈকত বক্তব্য দেন। এতে আলোচনায় অংশ নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।