বালু ও ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীদের দখলে মহাসড়ক, পরিবেশ দূষণ

Looks like you've blocked notifications!
ঝিনাইদহে বালু ও ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীদের দখলে মহাসড়ক। ছবি : এনটিভি

ঝিনাইদহে বালু ও ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীদের দখলে মহাসড়ক। এতে বালু উড়ে আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। ঘটছে পরিবেশ দূষণ। চরম ঝুঁকিতে শিশু-বৃদ্ধরা।

জেলা শহরের বাইপাস (হামদহ-আরাপপুর) সড়ক ঘেঁষে বালু ও ভাঙাড়ি ব্যবসার সারি সারি আড়ৎ গড়ে উঠেছে। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় দিবা-রাত্রি সেখানে চলছে কেনা-বেচা। ব্যস্ততম এ সড়কে বালু বোঝায় ট্রাক সকাল-সন্ধ্যায় রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে যানবাহন চলাচলে যেমন বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি উড়ন্ত বালু (রাস্তা পাশে রাখা বালু) আবাসিক ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। ঘটছে পরিবেশ দূষণ। এতে অতীষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নগরবাসী।

ওই সড়কের দুই ধারে অসংখ্য (শতাধিক) ভাঙাড়ির (পুরাতন জিনিসপত্র) দোকান গড়ে উঠেছে। এ সব অবৈধ ভাঙাড়ির দোকানে লোহা-লক্কর পলিথিন, পুরোনো হাড়ি-পাতিলসহ নানা জিনিসপত্র কেনা-বেচা হয়ে থাকে। পুরোনো ভাঙাড়ি মালামাল ট্রাকে লোড করার সময় মহাসড়ক দখলে চলে যায় তাদের। এ সময় ফায়ার সার্ভিস, জরুরি রোগী বহন করা অ্যাম্বুলেন্স যানজটে আটকে পড়ে। পথচারীসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে।

অন্য দিকে রাত একটু গভীর হলে সড়কের আরাপপুর এলাকায় সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে উত্তরবঙ্গগামী লোড ট্রাক। রাস্তার ধারে গড়ে উঠা খুপড়ি খাবারের দোকানগুলোতে চলে খাওয়া-দাওয়া। বেআইনিভাবে ট্রাকগুলো পার্ক করে চালক-হেল্পাররা খেতে বসেন। ওই সময় জরুরি সেবার যানবাহনগুলো সহজে চলাচল করতে পারে না।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, জেলা শহরের হামদহ-আরাপপুর বাইপাস সড়কের দুই পাশে রয়েছে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, ফায়ার সার্ভিস, টেলিকমিউনেকেসন্স কোম্পানি লিমিটেডের মাইক্রোওয়েভ স্টেশন। আরও রয়েছে ২৫০ বেডের সদর হাসপাতাল, নার্সিং ইনিস্টিটিউট, পুলিশ লাইনস, গুরুত্বপুর্ণ স্কুল, কলেজ ,মাদ্রাসা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ভাঙাড়ির লোহা কিংবা নষ্ট পেরেকের আঘাতে রক্তাত্ব হয়েছে অনেক পথচারী। একটি সূত্র বলেছে, বাসাবাড়ি থেকে চুরি হওয়া টিউবওয়েল, রড, লোহার দরজা, পাইপ, খবরের কাগজ, প্লাস্টিক, হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে এসব দোকান থেকে।

এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় সড়কগুলোতে বাড়ি নির্মাণের সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। জেলা শহরের জিরো পয়েন্ট (পোস্ট অফিস মোড়) পায়রা চত্বর হয়ে ঝিনাইদহ-মুজিবনগর সড়কের স্থানীয় চুয়াডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত পাকা রাস্তার ফুটপাত পুরোনো স্যালো ইঞ্জিন বিক্রেতা ও লেদ মেশিন মালিকদের দখলে। জেলা পরিষদের অসৎ লোকজনের প্রত্যক্ষ মদদেই এসব দখলবাজদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে।

চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটিসহ সিটিজেন ফোরামের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তাগিদ দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না। তারা পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।

ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, পৌরসভার নিজস্ব কোনো ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে পৌরসভা থেকে একাধিকবার মাইকিং করা হয়েছে। ওই সব বালু ব্যবসায়িকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে যেন খুব দ্রুতই তারা রাস্তার পাশ থেকে তাদের মালামাল সরিয়ে নেন।

ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, জেলা পরিষদের নজরে আসামাত্রই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিষয়টি নজরদারিতে রয়েছে।

জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।

 অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রথীন্দ্রনাথ রায় জানান, সড়কের পাশে রাখা বালুসহ অন্যান্য সামগ্রী সরানোর ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এ বিষয়ে সড়ক বিভাগের এগিয়ে আসা দরকার। পাশাপাশি নাগরিকদের সজচতন হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।