ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান, মুক্তিপণ দাবি
বান্দরবানে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের খোঁজে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি উপজেলায় সম্ভাব্য স্থানগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন সুস্থ আছেন এবং মুক্তিপণ বাবদ তাঁর পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ সন্ত্রাসীরা।
ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে অপহরণকারীদের মাধ্যমে পরিবারের সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নামপ্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সোনালী ব্যাংক বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. ওসমান গনি জানান, অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের মুক্তির বিষয়ে অপহরণকারীদের যোগাযোগ হয়েছে পরিবারের। যতটুকু জেনেছি, অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন সুস্থ আছেন। তাঁকে অপহরণকারীরা সন্ত্রাসীদের আস্তানায় আটকে রেখেছে। তাঁকে উদ্ধারে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। ব্যাংক ম্যানেজারকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে ঈদের আগমুহূর্তে হওয়ায় রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি উপজেলা ব্যতিত সব শাখায় ব্যাংকিং লেনদেন চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বন্ধ রাখা তিনটি উপজেলায়ও ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা হবে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের স্ত্রী বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাইছুরা ইশফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে অপহরণের তিন দিন পরও রুমা থানায় অপহরণ ও ব্যাংক লুটের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, অভিযান চলমান রয়েছে। ব্যাংক ও ১৪টি অস্ত্র লুট ও ম্যানেজার অপহরণের ঘটনায় বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, নিরাপত্তার স্বার্থে সব তথ্য বলা যাচ্ছে না। তবে সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে অভিযান চালাচ্ছে সম্ভাব্য স্থানগুলোতে। মামলার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গতকাল বুধবার দিনের বেলায় হঠাৎ তিনটি গাড়ি নিয়ে এসে থানচি উপজেলা বাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলো ঘেরাও করে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে থানচি সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা এবং কৃষি ব্যাংক শাখা থেকে দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রসীরা। এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে ১৫টি মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অপরদিকে গত মঙ্গলবার রাতে রুমা উপজেলা সোনালী ব্যাংক শাখা লুটের চেষ্টা করেছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুলিশের আটটি চায়না রাইফেল, দুটি এসএমজিসহ ১০টি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের চারটি শটগান ৩৫ রাউন্ড গুলিসহ ১৪টি অস্ত্র লুট করে সন্ত্রাসীরা। তবে ব্যাংকের চাবি না পাওয়ায় ভল্টের ভিতরে থাকা এক কোটি ৫৯ লাখ লুট করতে পারেনি লুটেরাদল। এদিকে মসজিদ থেকে বেরুনোর পর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভল্টের চাবি না দেওয়ায় ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণ, ব্যাংক ও অস্ত্রশস্ত্র লুটের ঘটনায় পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাসনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) জড়িত দাবি স্থানীয়দের। বছর দেড়েক আগে সশস্ত্র সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেএনএফ পেইজে নিজেদের শক্তি সক্ষমতার জানান দিতে চমক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।