নওগাঁয় ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা

Looks like you've blocked notifications!
নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে বাউল আখড়াবাড়িতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। ছবি : এনটিভি

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলার নাম লাঠিখেলা। লাঠি আর ঢোলের তালে শুরু হয় যুদ্ধ, অন্য দিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টায় টান টান উত্তেজনাকর এ খেলার নাম-ই লাঠি খেলা। লাঠি নিয়ে অদ্ভুত সব কসরত দেখিয়ে উপস্থিত সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন লাঠিয়াল সদস্যরা। 

আজ শুক্রবার (১২ এপ্রিল)  বিকেল ৫টার দিকে শহরের মুক্তির মোড়ে বাউল আখড়াবাড়ির ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ খেলার আয়োজন করা হয়। 

লাঠিখেলা দেখতে আসা ভীমপুর এলাকার বাসিন্দা মুমিন সরদার (৩৫)  বলেন, ‘গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া এ খেলা এখন আর দেখতেই পাওয়া যায় না।  বিভিন্ন সংগঠন প্রতি বছর এ খেলার আয়োজন করে বলে আমরা যুব সমাজ দেখতে পারি।  গ্রামীণ এ খেলাগুলো টিকিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকে চেষ্টা করা উচিত।’ 

শহরের পোস্ট অফিসপাড়ার মীম বলেন, ‘আমরা সবাই এখন ভিডিও গেইমের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছি দিন-দিন। তাই, গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো দেখলে অন্যরকম ভালো লাগে। বেড়াতে এসেছিলাম ঢোলের শব্দ শুনে এসে দেখি লাঠি খেলা হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে অনেক পুরোনো লাঠিখেলা দেখে।’  

লাঠিখেলার সদস্য আব্দুস সামাদ (৫৫) বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৩ বছর তখন আমার বাবার কাছ থেকে লাঠিখেলা শিখেছি। এক সময় প্রচুর খেলা দেখানোর জন্য দাওয়াত পেতাম। এখন আর পাই না। তবে এটা ভেবে ভালো লাগে যে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এখনও লাঠিখেলাকে টিকিয়ে রেখেছে।’ 

দরিয়াপুর গ্রামের সাহাজ আলী সরদার (৬০) বলেন, ‘আমার বয়স অনেক হয়েছে। তবুও আমি সুস্থ আছি নিয়মিত লাঠিখেলার কারণে। আমার যারা ওস্তাদ ছিলেন সবাই মারা গেছেন। তাদের শেখানো লাঠিখেলা দেখিয়ে গ্রামের মানুষকে আনন্দ দিয়ে থাকি। একটা সময় ছিল প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দাওয়াত পেতাম। তবে এখন আর আগের সময় নেই। সবাই বিভিন্ন ধরনের অনলাইন গেইম নিয়ে ব্যস্ত। গ্রামীণ খেলাগুলোর মাধ্যমে যুবসমাজ বিভিন্ন ধরনের নেশা থেকে বিরত থাকবে বলে আমি মনে করি।’ 

বাউল আখড়াবাড়ির সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘লাঠিখেলা হলো গ্রামীণ ঐতিহ্য। এটি যেন বিলীন না হয়ে যায় সেজন্য আমরা আয়োজন করেছি, যাতে মানুষ গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।’ 

সারোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘মূলত এখানে বাউল গানের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে কিছু করতে পারি না। কারণ লাঠিখেলাও আমাদের ঐতিহ্য। আমরা প্রতি বছর লাঠিখেলা ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’